বাংলায় ভোটরঙ্গ জমে গিয়েছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন ইস্যুতে তৃণমূল ও বিজেপি একে অপরের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছে। আর এই আবহেই রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তকে বিধানসভা ভোটে টিকিট দিয়ে কিছুটা ব্যাকফুটে গেরুয়া শিবির। গত রবিবার প্রকাশিত হয়েছে বাংলায় তৃতীয় ও চতুর্থ দফা ভোটের জন্য বিজেপির প্রার্থী তালিকা। তাতে সবাইকে অবাক করে দিয়ে নাম রয়েছে দলের চার সাংসদের। যাঁদের মধ্যে অন্যতম স্বপন দাশগুপ্ত। তিনি রাজ্যসভা থেকে বিজেপির সাংসদ। আর রাজ্যসভার সাংসদকে এভাবে ভোটের ময়দানে নামিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিয়েই বিজেপির বিরুদ্ধে ময়দানে নেমে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
বিজেপির প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে তারকেশ্বর থেকে এবার ভোটে লড়বে স্বপন দাশগুপ্ত। স্বপনের নাম সামনে আসতেই তাঁর সাংসদপদ বাতিলের দাবি তুলেছেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। ট্যুইটারে মহুয়া দাবি করেছে, সংবিধানের দশম তফসিল অনুযায়ী, স্বপন দাশগুপ্ত ভোটে দাঁড়াতে পারেন না। কারণ হিসেবে তৃণমূল সাংসদ জানিয়েছেন, রাজ্যসভার কোনও মনোনীত সদস্য সাংসদ হিসেবে শপথ নেওয়ার ৬ মাস পর কোনও রাজনৈতিক দলে যোগ দিলে তাঁর সদস্যপদ বাতিল হয়ে যায়।
Swapan Dasgupta is BJP candidate for WB polls.
— Mahua Moitra (@MahuaMoitra) March 15, 2021
10th Schedule of Constitution says nominated RS member to be disqualified if he joins any political party AFTER expiry of 6 months from oath.
He was sworn in April 2016, remains unallied.
Must be disqualified NOW for joining BJP. pic.twitter.com/d3CDc9dNCe
মহুয়ে যে প্রশ্ন তুলেছেন
ট্যুইটারে সাংসদ মহুয়া মৈত্র টুইটারে একটি পোস্টে বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন স্বপন দাশগুপ্ত। যেখানে সংবিধানের দশম তফসিল বলছে যে কোনও রাজ্যসভা মনোনীত সংসদ সদস্য যদি ৬ মাস পর কোনও রাজনৈতিক দলে যোগ , তবে তাকে রাজ্যসভার সদস্যপদে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। সেই অনুযায়ী ২০১৬ সালের এপ্রিলে রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে শপথ নেন স্বপন দাশগুপ্ত। তাই এবার বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য তাঁর সাংসদ পদ বাতিল হওয়া উচিত।
নিজের বক্তব্যের সমর্থনে ভারতীয় সংবিধানের দশম তফসিলের স্ক্রিনশটও সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে দেন মহুয়া মৈত্র। মঙ্গলবার বিষয়টি রাজ্যসভায় তুলতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস।
সংবিধানের দশম তফসিলের কারণেই স্বপ্নন দাশগুপ্তের প্রার্থীপদ নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। দশম তফসিলে ঠিক কী বলা হয়েছে? দশম তফসিলের ধারা ১০২ (২) এবং ১৯১ (২) এর অধীনে অপসারণের বিষয়ে আইনের ৩ টি বিধি অনুসারে বলা হয়েছে, শপথ নেওয়ার ছ’মাসের মধ্যে কোনও মনোনীত সদস্য রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে পারেন। কিন্তু শপথগ্রহণের ছ’মাস পেরনোর পর তিনি যদি কোনও রাজনৈতিক দলে যোগ দেন, সে ক্ষেত্রে তাঁর সাংসদ পদটি বাতিল হয়ে যাবে।
যদিও দাশগুপ্ত এখনও তার মনোনয়ন দাখিল করেননি, তিনি তারকেশ্বরের প্রার্থী মনোনয়নের স্বাগত জানিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিতে তারকেশ্বর থেকে মনোনীত হওয়ার কারণে আমি সম্মানিত। আমি একটি নতুন, প্রাণবন্ত সোনার বাংলা প্রচারের প্রত্যাশায় রয়েছি।
এদিকে বিজেপি-র প্রার্থী হিসেবে স্বপনের নামই ঘোষিত হয়েছে মাত্র। তিনি এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেননি। সোমবার রাত পর্যন্ত স্বপন দাশগুপ্তকে রাজ্যসভার ওয়েবসাইটে মনোনীত সদস্য হিসাবে দেখানো হচ্ছে। দাশগুপ্তকে এ২০১৬ সালের এপ্রিলে মোদী সরকার রাজ্যসভায় মনোনীত করেছিল। সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর মতোই, রাকেশ সিনহা ও সোনাল মানসিংহ মনোনয়নের পরপরই রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে একটি চিঠি লিখে নিজেদেরকে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত বলে জানিয়েছিলেন। তাই যদি স্বপন দাশগুপ্ত ওই সময়সীমার মধ্যেই বিজেপি-তে যোগ দিয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে তাঁরও সদস্যপদ বাতিল হবে না। কিন্তু তা যদি না হয়, সে ক্ষেত্রে মহুয়া মৈত্র ঠিকই বলছেন।
সিদ্ধান্ত নেবেন চেয়ারম্যান
এই ইস্যুতে সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞ ও লোকসভার প্রাক্তন মহাসচিব সুভাষ কাশ্যপ বলেছিলেন যে এই বিষয়টিতে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে নিয়ম অনুযায়ী, শপথ গ্রহণের ছয় মাসের মধ্যে যদি রাজ্যসভায় মনোনীত সদস্য নিজেকে কোনও দলে অন্তর্ভুক্ত না করেন এবং পরবর্তীতে রাজনৈতিক দলের পক্ষে মনোনয়ন জমা দেন তবে তাঁর সাংসদপদ যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, অতীতে এমন নজির আর নেই। ফলে স্বপন দাশগুপ্ত বিজেপিতে যোগ না দিয়ে থাকলে তারকেশ্বর থেকে ভোটে দাঁড়ালে তাঁর সাংসদ পদ যেতে পারে। তবে এই বিষয়ে এখনও স্বপনবাবুর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।