scorecardresearch
 

Satyajit Ray Birth Centenary: টাকার জন্য সত্যজিৎও দোরে দোরে ঘুরেছেন

লন্ডন থেকে জাহাজে করে দেশে ফেরার সময় তাঁর বিখ্যাত খেরোর খাতায় একে একে ফুটে উঠেছিল পথের পাঁচালীর নানা দৃশ্য এবং সিক্যুয়েন্স। ভেবেছিলেন তাঁর সৃষ্টিশীলতা প্রযোজকদের সিনেমার বিষয়ে বোঝাতে সাহায্য করবে। এখানেই বিরাট ভুল করে ফেলেন সত্যজিৎ।

Advertisement
সত্যজিৎ রায়। সত্যজিৎ রায়।
হাইলাইটস
  • কমার্শিয়াল আর্টের প্রতি নিজের আগ্রহ, ইচ্ছা এবং আশা পূরণ করলেন ঠিকই, কিন্তু সেটা করলেন বড় পর্দায়।
  • পথের পাঁচালীর জন্য তিনি রীতিমতো প্রযোজকদের দোরে দোরে ঘুরেছেন টাকার জন্য।
  • শেষ পর্যন্ত স্ত্রী বিজয়া রায়ের গয়না বিক্রি করেছিলেন। বন্ধু-বান্ধবদের কাছে ধারও করেছিলেন।

পড়তে চেয়েছিলেন ইংরেজি। পড়তে হয়েছিল অর্থনীতি। আক্ষেপ ছিল সারাজীবন। মায়ের ইচ্ছাতে শান্তিনিকেতনে গিয়ে চারুকলা বিভাগে ভরতি হন সত্যজিৎ (Satyajit Ray)। যে কোনও সৃষ্টিশীল মানুষের একটা অনুঘটকের প্রয়োজন হয়। শান্তিনিকেতন ছিল সত্যজিৎ রায়ের কাছে সেই অনুঘটক। অসম্ভব চিন্তাশীল তো ছিলেনই, শান্তিনিকেতনে গিয়ে প্রকৃতি প্রেমী এবং শিল্প প্রেমীও হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তাঁর হাতের ছোঁয়ায় অসামান্য ছবি, ক্যালিগ্রাফি তৈরি হতে লাগল। যেটা সিনেমা তৈরির সময় এবং বিভিন্ন সময় নিজের প্রকাশিত বইয়ের প্রচ্ছদ এবং আঁকার ক্ষেত্রে ভীষণ ভাবে কাজে এসেছিল। নন্দলাল বসু, বিনোদবিহারি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সর্বোপরি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সান্নিধ্য তৈরি করে দিয়েছিল তাঁর ভবিষ্যতের জমি।

বিজ্ঞাপনী ছবির প্রতি বেশি আকর্ষণ ছিল সত্যজিতের। কিন্তু শান্তিনিকেতন তাঁকে আরও বড় পর্দার জন্য যেন তৈরির সুপরামর্শ দিয়ে গিয়েছে। সেখানকার বিরাট গ্রন্থাগারে সিনেমার রত্ন ভাণ্ডারের খোঁজ পেয়েছিলেন সত্যজিৎ। বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র নিয়ে নানা ধরনের বই তাঁর কাছে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছিল। কমার্শিয়াল আর্টের প্রতি নিজের আগ্রহ, ইচ্ছা এবং আশা পূরণ করলেন ঠিকই, কিন্তু সেটা করলেন বড় পর্দায়। লন্ডন থেকে জাহাজে করে দেশে ফেরার সময় তাঁর বিখ্যাত খেরোর খাতায় একে একে ফুটে উঠেছিল পথের পাঁচালীর নানা দৃশ্য এবং সিক্যুয়েন্স। ভেবেছিলেন তাঁর সৃষ্টিশীলতা প্রযোজকদের সিনেমার বিষয়ে বোঝাতে সাহায্য করবে। এখানেই বিরাট ভুল করে ফেলেন সত্যজিৎ।

পথের পাঁচালীর জন্য তিনি রীতিমতো প্রযোজকদের দোরে দোরে ঘুরেছেন টাকার জন্য। পঞ্চাশের দশকে প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুকুমার রায়ের পুত্র সিনেমার তৈরি করবেন, এটা নিয়ে নানা ধরনের কৌতুহল তৈরি হয়েছিল। বলাই বাহুল্য, তার বেশিরভাগই ছিল ব্যঙ্গাত্মক। রসিক সত্যজিৎ ব্যঙ্গ নিয়ে বিশেষ চিন্তিত ছিলেন না। তাঁর সৃষ্টি এবং সিনেমার দৃষ্টিভঙ্গির উপর অগাধ আস্থা ছিল। তার প্রমাণ অবশ্য পরে সেই টিপ্পনীকাররা পেয়েছিলেন। সিনেমা তৈরি করতে শেষ পর্যন্ত স্ত্রী বিজয়া রায়ের গয়না বিক্রি করেছিলেন। বন্ধু-বান্ধবদের কাছে ধারও করেছিলেন। কেউ কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তা যথেষ্ট ছিল না। বার বার টাকার অভাবে শুটিং বন্ধ করে দিতে হয়। অভিনেতাদের বয়স বেড়ে যাচ্ছে, এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেছিলেন সত্যজিৎ।

Advertisement

শেষে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় তাঁকে সরকারি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। তবে সেই টাকাও এক লপ্তে পাননি সত্যজিৎ। প্রায় আড়াই বছর পর শেষ হয় শুটিংয়ের কাজ। তার পর পোস্ট প্রোডাকশন। ১৯৫৫ সালের ২৬ অগস্ট মুক্তি পেয়েছিল সিনেমাটি। প্রথম এক সপ্তাহ সিনেমা হলে তেমন ভিড়ই ছিল না। অবস্থা দেখে খানিকটা হতাশই হয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। তবে বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি। দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দর্শকাসন ভরে উঠতে শুরু করে। তার পর বাকিটা ইতিহাস। আজ একশও বছরের 'যুবক' পরপাড়ে বসে ঘটনা মনে করে দেদার হাসছেন নিশ্চয়ই।

 

Advertisement