আসন্ন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে পঞ্জাব কিংস নতুন নামের সঙ্গে নতুন একটা স্বপ্ন বুকে বেঁধে মাঠে নামতে চলেছে। তাঁদের আশা, এবার হয়ত ভাগ্য বদলাতে পারে। তাঁরা ডেথ ওভারের বোলিং উন্নত করার পাশাপাশি দলের মিডল অর্ডারের ব্যাটিংয়ের উপরেও যথেষ্ট জোর দিয়েছেন।
পঞ্জাবের এই দলটা গত মরশুমে ক্রমাগত পাঁচটা ম্যাচ জিতে ষষ্ঠস্থানে উঠে এসেছিল। কিন্তু, অল্পের জন্য তারা প্লে-অফে পৌঁছতে পারেনি। গত মরশুমের প্রথম ম্যাচে দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে বিতর্কিত রান আউটের মূল্য তাদের চোকাতে হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তটা যদি তাদের বিপক্ষে না যেত, তাহলে হয়ত দলটাকে শেষ চারেও দেখতে পাওয়া যেত। অন্যদিকে আবার দলের প্রধান জোরে বোলার মহম্মদ শামি আর কোনও বোলারকে তাঁর পাশে পাননি। বড় বড় শট হাঁকানোর জন্য পরিচিত গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটও নীরব ছিল। আগামী মরশুমে এই সমস্যাগুলো কাটানোর দিকে ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি আরও বেশি করে নজর দিয়েছেন। আগামী ১২ এপ্রিল মুম্বইয়ে রাজস্থান রয়্য়ালসের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামবে পঞ্জাব কিংস।
রাহুল-ময়াঙ্কের ওপেনিং জুটি
এই দলের সবথেকে শক্তিশালী দিকটা হল, তাদের ব্যাটিং। অধিনায়ক কেএল রাহুল গত মরশুমে সবথেকে বেশি রান করেছিলেন। এবারও তাঁদের যথেষ্ট ভালো ছন্দে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। রাহুলের সঙ্গে ময়াঙ্ক আগরওয়ালের ওপেনিং জুটির ওপরে দল অনেকটাই ভরসা করে। পঞ্জাব কিংস এখনও পর্যন্ত একবারও আইপিএল খেতাব জিততে পারেনি। কিন্তু, এবার কাগজে-কলমে এই দলটাকে যথেষ্ট মজবুত দেখাচ্ছে। রাহুলের নেতৃত্ব এবং কোচ অনিল কুম্বলের নজরদারিতে এবার পঞ্জাব কিংস চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যেই মাঠে নামবে। পাশাপাশি আগামী টি-২০ বিশ্বকাপের আগেও রাহুল নিজের প্রয়োজনীয় অনুশীলন সেরে নিতে পারবেন।
প্রথম থেকেই গেইলের কাঁধে থাকবে দায়িত্ব
'ইউনিভার্সাল বস' ক্রিস গেইল গত মরশুমের প্রধমার্ধটা প্রায় খেলতেই পারেননি। কিন্তু, পরের সাতটা ম্যাচে তিনি ২৮৮ রান করেছিলেন। স্ট্রাইক রেট ১৩৭.১৪। আসন্ন মরশুমে আশা করা হচ্ছে, প্রথম ম্যাচ থেকেই তিনি মাঠে নামতে পারবেন। বড় শট মারতে পারা উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান নিকোলাস পূরাণ নামতে পারেন চার নম্বরে। আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রমতালিকায় শীর্ষে থাকা ডেভিড মালানও এবার দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। গেইল এবং পূরাণের বিকল্প হিসেবে তাঁকে দেখা যেতেই পারে। ম্যাক্সওয়েলকে ছেড়ে দেওয়ার পর অলরাউন্ডার মোজ়েস হেনরিকসকে তুলে নিয়েছে পঞ্জাব কিংস। সঙ্গে নিয়েছেন তামিলনাড়ুর ব্যাটসম্যান শাহরুখ খানকেও। এতে দলের মিডল অর্ডার অনেকটাই শক্তিশালী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অভিজ্ঞ দীপক হুডারও বড় শট খেলার ক্ষমতা রয়েছে। পঞ্জাবের হাতে আরও একজন বিদেশি অলরাউন্ডার রয়েছে। আর তিনি হলেন ফ্যাবিয়েন অ্যালেন।
শামির উপর থাকবে নজর
গত আইপিল মরশুমে মহম্মদ শামি ২০টি উইকেট শিকার করেছিলেন। কিন্তু, অস্ট্রেলিয়া সফর চলাকালীন কনুইয়ে চোট পাওয়ার পর তিনি প্রায় চার মাস মাঠের বাইরে ছিলেন। তবে আইপিএল টুর্নামেন্টে আবারও তাঁকে ২২ গজের যুদ্ধে দেখতে পাওয়া যাবে। এই পরিস্থিতিতে শামির ফর্মের উপরেও থাকবে কড়া নজর। অস্ট্রেলিয়ার জোরে বোলার ঝাই রিচার্ডসন এবং রিলে মেরেডিথ দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পর পঞ্জাবের পেস ডিপার্টমেন্ট অনেকটাই শক্তিশালী হয়ে গেছে। মেরেডিথ বিগ ব্যাস লিগে যথেষ্ট ভালো পারফরম্যান্স করেছিলেন। তিনি দলে যোগ দেওয়ার পর মহম্মদ শামি এবং ইংল্যান্ডের ক্রিস জর্ডনের ওপর চাপ অনেকটাই কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুরুগান এবং বিষ্ণোইয়ের উপর রয়েছে স্পিনের দায়িত্ব
দলে যদিও খুব একটা ভালো স্পিনার নেই, এর অভাব পঞ্জাব কিংসকে ভুগতে হতে পারে। কৃষ্ণাপ্পা গৌতমকে পঞ্জাব কিংস ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কারণ গত মরশুমে ভারতীয় বোলারদের মধ্যে তিনি সবথেকে বেশি রান দিয়েছিলেন। তবে গত মরশুমে বল হাতে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছিলেন মুরুগান অশ্বিন এবং রবি বিষ্ণোই। দল চাইবে তাঁরা আরও একবার তেমনই পারফরম্যান্স করুক। পাশাপাশি এই দলে যোগ দিয়েছেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার জলজ সাক্সেনা। ঘরোয়া ক্রিকেটের এই অভিজ্ঞ খেলোয়াড় সম্প্রতি সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে ১০ উইকেট শিকার করেছিলেন। স্ট্রাইক রেট ৬.২৬। তবে এই দলে কোনও আন্তর্জাতিক স্তরের স্পিনার না থাকার অভাব ভুগতে হতে পারে।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক পঞ্জাব কিংস দলটাকে :
কেএল রাহুল (অধিনায়ক-উইকেটকিপার), ময়াঙ্ক আগরওয়াল, ক্রিস গেইল, মনদীপ সিং, প্রভসিমরন সিং, নিকোলাস পূরাণ (উইকেটকিপার), সরফরাজ় খান, দীপক চাড্ডা, মুরুগান অশ্বিন, রবি বিষ্ণোই, হরপ্রীত বহাড়, মহম্মদ শামি, আর্শদীপ সিং, ইশান পোড়েল, দর্শন নালকোন্ডে, ক্রিস জর্ডন, ডেভিড মালান, ঝাই রিচার্ডসন, শাহরুখ খান, রিলে মেরেডিথ, মোজ়েস হেনরিকস, জলজ সাক্সেনা, উৎকর্ষ সিং, ফ্যাবিয়ান অ্যালেন, সৌরভ কুমার