ধসে-জলস্ফীতিতে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ ও সিকিম। টানা বৃষ্টি চলতে থাকায় পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোরালো হচ্ছে। প্রতিদিনই জল বাড়ছে উত্তরবঙ্গের নদীগুলিতে। সিকিমের পাশাপাশি ভুটানেও প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় ডুয়ার্সেও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে উত্তরবঙ্গ থেকে বৃষ্টি বিদায়ের কোনও আভাস নেই। প্রায় সব জেলাতেই ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ারে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এই মুহূর্তে উৎসবের মরশুম চলছে। কালীপুজো এবং তারপর ছটপুজো। ফলে নদীর একটা ভূমিকা রয়েছে। বৃষ্টি না কমলে উৎসবগুলি পালন করতে সমস্য়ায় পড়তে হতে পারে বলে কপালে উদ্বেগের ভাঁজ প্রশাসনের।
রাস্তায় ধস? টেনশন নেই, দার্জিলিং বা সিকিম যাওয়ার বিকল্প ও সহজ রুটগুলি রইল
বঙ্গোপসাগর থেকে বয়ে আসা জলীয়বাষ্পপূর্ণ বাতাসের কারণেই এই বৃষ্টি বলে জানানো হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার থেকে অবস্থার খানিকটা উন্নতি হবে বলে মনে করছেন আবহবিদরা। তবে সিকিমের মতো দার্জিলিং পাহাড়েও ধসের শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ির বেশ কিছু নদীর জল উপচে পড়ছে। তাই সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে।
সিকিমের পরিস্থিতি
আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস ছিলই,সেই মত গত কয়েকদিন ধরে লাগাতার টানা বৃষ্টিতে প্রতিবেশী রাজ্য সিকিমের বিভিন্ন জায়গায় ধসে বিপর্যস্ত একাধিক এলাকা। বিশেষ করে উত্তর সিকিমের বেশ কয়েকটি জায়গাতে ধসের কারণে একপ্রকার স্তব্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। তুমুল বর্ষণের জেরে বিপাকে উত্তর সিকিমের বিস্তীর্ণ এলাকা। বিপাকে পড়েছেন ঘুরতে যাওয়া পর্যটকরাও।বৃষ্টির জেরে সিকিমে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের কয়েকটি জায়গায় ধসও নেমেছে। এদিকে জল বাড়ছে নদীগুলিতে। এই পরিস্থিতিতে আপাতত বিপর্যয় ও দুর্ঘটনা এড়াতে উত্তরর সিকিমে নতুন করে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল সিকিম সরকারের তরফে। পরবর্তী নির্দেশ জারি না হওয়া পর্যন্ত পর্যটকদের সেখানে প্রবেশের অনুমতি মিলবে না। পর্যটকদের সবাইকে নামিয়ে আনা হয়েছে।
ভুটানের অবস্থা
ভুটানেও টানা বৃষ্টি চলছে। ডুয়ার্স লাগোয়া ভুটানের নদীগুলি থেকে জল নেমে সমতলে এ রাজ্যের আলিপুরদুয়ারে জেলার বহু এলাকায় নদীতে জল বেড়েছে। এর জেরে জলস্ফীতি তৈরি হয়েছে ভারত-ভুটান সীমান্ত লাগোয়া জয়গাঁর বিভিন্ন এলাকায়। ভুটান থেকে বয়ে আসা ঝরনার জলে বন্যার পরিস্থিতি ভারত-ভুটান সীমান্তের জয়গাঁও থানার ঝরনা বস্তি এলাকায়। জগাঁওয়ের কাছে ভুটান সীমান্ত এলাকার নালা দিয়ে দ্রুত গতিতে জল বইতে থাকে। জলস্রোতে ভারত-ভুটান সীমান্ত-ঘেঁষা রাস্তাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জলের স্রোতে নিমেষে ভেসে গিয়েছে এলাকার যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাও।
আরও পড়ুনঃ এখনই বিরাম নয়, উত্তরে আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস
ডুয়ার্সের চিত্র
অন্য দিকে, ভুটান পাহাড়ের পাশাপাশি ধূপগুড়ি, জলপাইগুড়ি এবং মালবাজারেও মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। যার জেরে ওই জেলাগুলিতেও বিপর্যস্ত জনজীবন। পরপর দুদিন টানা বৃষ্টিতে শহরের ডিমা ও কালজানি নদীর চরের বাসিন্দাদের রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে। সোমবার রাতেই প্রায় ১৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, তার জেরে শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে দুটি নদীতে জলস্তর বাড়তে থাকে। আলিপুরদুয়ার শহরের ডিমা নদীর চরের শতাধিক পরিবার জলমগ্ন হয়ে পড়েছেন। এদিন সকাল থেকেই কয়েকটি পাম্প চালিয়ে শহরের ভেতরের জমা জল নদীতে বের করে দেওয়া হয়েছে।
ডুয়ার্সেও ধস
প্রবল বৃষ্টিতে ধস নেমেছে বাগরাকোট থেকে সিকিমগামী জাতীয় সড়কেও। তার জেরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ইয়েলবং, চুইখিম, বরবট, নিমবং-সহ একাধিক পাহাড়ি গ্রাম। সোমবার রাতে ওই ধস নেমেছে। শুরু হয়েছে তা সরানোর কাজ। গত ২-৩ দিন ধরেই কালিম্পঙের পাহাড়ি এলাকায় একটানা বৃষ্টি হয়ে চলেছে। তার জেরে ধস নেমেছে ওই জাতীয় সড়কে। কালিম্পঙের এলবং এবং চুইখিম এলাকায় ধস নেমেছিল সোমবার রাতে। ওদলাবাড়ি থেকে নাথুলা সীমান্ত যাওয়ার জন্য নতুন করে তৈরি হচ্ছে ৬১ কিলোমিটার রাস্তা। সেখানেই ধস নামে সোমবার রাতে।
উত্তরবঙ্গের জন্য পূর্বাভাস কী বলছে?
বঙ্গোপসাগর থেকে আসা জলীয় বাষ্পে এবং পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জন্য সিকিম এবং উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে মঙ্গলবারও বৃষ্টি হয়েছে। যা চলবে বুধবারও। শিলিগুড়ি থেকে সিকিমগামী ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক খোলা থাকলেও, রাস্তার অবস্থা বেহাল। এ দিন দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারের কোথাও মাঝারি, কোথাও ভারী বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসেও জানানো হয়েছে, আজ, বুধবার পর্যন্ত ভারী এবং বিক্ষিপ্ত অতি-ভারী বৃষ্টির দাপট চলবে উত্তরবঙ্গে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টির দাপট কিছুটা কমবে। তবে হালকা, মাঝারি বৃষ্টি চলতে পারে উত্তরবঙ্গ জুড়েই।’’
আরও পড়ুনঃ'চোখের সামনে বড় বড় পাথর গড়িয়ে পড়ছে', সিকিমে অভিজ্ঞতা বাংলাদেশি পর্যটকের
প্রশাসনিক উদ্যোগ
এ রাজ্যের সরকারি বাস সংস্থা এনবিএসটিসির তরফে বাস পাঠিয়ে সিকিম থেকে পর্যটক ও এ রাজ্যের লোকেদের নামিয়ে আনা হয়েছে মঙ্গলবার বিকেলে।
যোগাযোগের পরিস্থিতি
দার্জিলিং, কার্শিয়াংগামী ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়ক, রোহিনী রোড এবং পাঙ্খাবাড়ি রোড দিয়ে যাতায়াত করা গেলেও ওই রোডগুলি বিপজ্জনক হয়ে রয়েছে। সিকিমের ‘লাইফ লাইন’ এবং কালিম্পঙে যাতায়াতকারী ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের ১৯, ২০ এবং ৩২ মাইলের পরিস্থিতি ভাল নয়। সিকিমের দিকে রংপো থেকে রানিপুল পর্যন্ত পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। উত্তর সিকিমের চুংথাং, লাচেন এবং লাচুং পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। লাচুং এলাকায় রাস্তা বন্ধ থাকায় কিছু হোটেলে পর্যটকেরা আছেন। তবে সবাই সুরক্ষিত। দক্ষিণ সিকিমের নামচি, ওয়াংওয়াং-র দিকেও খারাপ অবস্থা।