টেলিপাড়ার শ্যুটিংয়ের জট যেন কেটেও কাটছে না। কার্যত লকডাউনের বিধি নিষেধ কিছুটা শিথিল হওয়ার পর মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, রাজ চক্রবর্তী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়দের প্রতিনিধিত্বে ফেডারেশন (Federation of Cine Technicians & Workers of Eastern India), আর্টিস্ট ফোরাম (West Bengal Motion Picture Artist Forum) এবং প্রোডিউসার্স গিল্ডের (Welfare Association Of Television Producers) মিলিত বৈঠক হয়। সেখানে পুনরায় শ্যুটিং চালুর সিদ্ধান্ত হয়। তবে নতুন করে সমস্যা তৈরি হয়, ফেডারেশনের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর। নতুন সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুরনো ধারাবাহিকের কাজ চালু থাকলেও যতক্ষণ না মউ (MOU) স্বাক্ষরিত হচ্ছে, ততক্ষণ নতুন ধারাবাহিকের কাজ বন্ধ থাকবে। আর এরপরই ফের নতুন করে বিপাকে পড়েন প্রযোজক মহল থেকে শিল্পীরা।
অ্যাক্রোপলিস এন্টারটেনমেন্টের নতুন ধারাবাহিক 'মন ফাগুন'-র শ্যুটিংয়ের যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ মেসেজ আসায় না স্থগিত হয় ফের। এছাড়াও 'ধুলোকণা', 'শ্রীকৃষ্ণ ভক্ত মীরা','সর্বজয়া'-র মতো আরও বেশ কিছু নতুন ধারবাহিক এই মুহূর্তে শ্যুটিং শুরুর অপেক্ষায়। ফের শ্যুটিং স্থগিত হওয়ায় স্থগিত হওয়ার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ধারাবাহিকের প্রযোজকেরা।
আরও পড়ুন: টানা দশ সপ্তাহ সেরা 'মিঠাই'! এগিয়ে এসে চমক 'শ্রীময়ী'-র
প্রশ্নের মুখোমুখি টেলিপাড়ার ভবিষ্যৎ। করোনা পরিস্থিতিতে যেখানে শিল্পী ও কলাকুশলীদের এক অত্যন্ত সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে, সেখানে এরকম সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে একটি বিবৃতি দেওয়া হয় আর্টিস্ট ফোরামের তরফ থেকে। সেখানে জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ধারাবাহিকের শ্যুটিং শুরু হওয়ায় আশার আলো দেখতে পান শিল্পীরা। এর মধ্যে নতুন কিছু ধারাবাহিকের শ্যুটিং শুরুর কথা হলে, তাঁরা আরও সুদিনের সম্ভাবনা দেখতে শুরু করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আকস্মিকভাবেই নতুন ধারাবাহিকের শ্যুটিং বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে।"
আরও পড়ুন: আসছে ভিন্ন স্বাদের তিন Web Series! সুসম্পন্ন হল শুভ মহরত
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সমস্ত শিল্পী ও কলাকুশলীদের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে দাবী তুলছি - অবিলম্বে সমস্ত নতুন ধারাবাহিকের কাজ শুরু হোক। যদি কোনও মত পার্থক্য থাকে তাঁর মীমাংসা হোক আলোচনার টেবিলে - শ্যুটিং ফ্লোরের বন্ধ দরজা প্রেক্ষাপটে নয়।" সেই সঙ্গে আর্টিস্ট ফোরামের তরফ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় শিল্পীদের কর্মসংস্থান নিয়ে।
আর্টিস্ট ফোরামের যুগ্ম সভাপতি শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, এই বিবৃতিতে জানান, "নতুন ১৫টি ধারাবাহিকের কাজ শুরু হলে কলাকুশলী ও শিল্পী মিলিয়ে ন্যূনতম ১০০০ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তাঁদের পরিবার নিয়ে ছনিনিমিনি খেলার বিরুদ্ধে তাই আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে সমস্ত ধারাবাহিকের কাজ (নতুন বা পুরনো) সুষ্ঠভাবে চালু করার/ রাখার দাবী তুলছি।"
আরও পড়ুন: রিয়েলিটি শো-তে অংশ নেবেন? কী জানালেন অঙ্কিতা
অন্যদিকে মঙ্গলবার একটি খোলা চিঠিতে প্রযোজকদের সমর্থন জানিয়ে ফেডারেশনের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন অজ্ঞাতপরিচয় এক কলাকুশলী। সেই চিঠিতে নিজের নাম-পরিচয় গোপন রেখেই তিনি অভিযোগ জানিয়েছেন, অতিমারির জন্য উপার্জনহীন হয়ে টেলিপাড়ার প্রায় সকলেই সমস্যার সম্মুখীন। সেই সময়ে কলাকুশলীরা ফেডারেশন বা গিল্ডের কাছে কোনও অর্থসাহায্য না চাইলেও বিপদের সময়ে নিঃস্বার্থ ভাবে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রযোজকেরা। ফেডারেশনের কিছু কর্মকর্তার নির্দেশে কলাকুশলীদের পারিশ্রমিক ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বলেন গিল্ডের কিছু কর্মকর্তা, এই অভিযোগ তোলেন, তিনি।
আরও পড়ুন: ২ বছরে শেষ হল গাঙ্গুবাই-র শুটিং! আবেগী পোস্ট আলিয়ার
প্রসঙ্গত, কথা মতোই গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, রাজ চক্রবর্তী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়দের প্রতিনিধিত্বে ফেডারেশন, আর্টিস্ট ফোরাম এবং প্রোডিউসার্স গিল্ডের মিলিত বৈঠকে সব চাপানউতোর ভুলে কাজের স্বার্থে সকলে মিলে টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির গাইডলাইন তৈরির পদক্ষেপ করা হয়। ২০ জুলাইয়ের মধ্যে সেই গাইডলাইন তৈরি হয়ে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে চূড়ান্ত ভাবে তা কার্যকর করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শোনা যাচ্ছে গত তিন বছর ধরে মউ স্বাক্ষর আটকে রয়েছে এবং স্বাক্ষরে থাকা অনেক বিষয় নিয়ে মতবিরোধ তৈরি হয়েছিল ফেডারেশন ও প্রোডিউসার্স গিল্ডের। এবার সেই সব সমস্যা মিটিয়ে নতুন করে গাইডলাইন তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সমস্ত ভুল বোঝাবুঝি ভুলে আগামী দিনে যাতে কাজের পরিবেশ নষ্ট না হয়, সেই দিকে নজর রাখার দায়িত্ব ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত সকলের।