এই মুহূর্তে শিরোনামে রূপঙ্কর বাগচী (Rupankar Bagchi)। নেটিজেনদের অনেকেই ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সঙ্গীতশিল্পীর বিরুদ্ধে। সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো সমালোচনার ঝড় উঠেছে। প্রয়াত শিল্পী কেকে (KK)-র নজরুল মঞ্চে কনসার্ট ঘিরে, প্রায় মাসখানেক আগে থেকেই ছিল উত্তেজনা।
সম্প্রতি একটি ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করেন রূপঙ্কর বাগচী। আর সেই ভিডিও দেখেই তাঁকে তীব্রভাবে কটাক্ষ শুধু হয়েছে নেটপাড়ায়। রূপঙ্করের মন্তব্যর সঙ্গে কতটা একমত বাংলার অন্যান্য শিল্পীরা? শুনল আজতক বাংলা...
সঙ্গীতশিল্পী ইমন চক্রবর্তী (Iman Chakraborty) আজতক বাংলাকে বলেন, "রূপঙ্করদা ওঁর বক্তব্য রেখেছেন, আমার এখানে কিছু বলার নেই। আমি একটা ফেসবুক লাইভ করেছি, সেখানেই সবটা জানিয়েছি।" ফেসবুক লাইভে ইমন বলেন, "আমি ফেসবুকে দেখলাম রূপঙ্করদা কিছু বক্তব্য রেখেছেন, ওঁর মতো করে যেটা বলতে চেয়েছেন... সেখানে আমার নামও আছে। রূপঙ্করদা আমি কৃতজ্ঞ যে, তুমি আমার কথা ভেবেছ, শিল্পীদের হয়ে তুমি কথা বলেছ। কিন্তু এটা বলার আগে যদি একবার যাদের নাম বলেছ, তাঁদের থেকে জানতে চাইতে যে এটা তাঁদেরও বক্তব্য কিনা, তাহলে খুব ভাল হত। এটা একেবারেই আমার বক্তব্য না। রূপঙ্করদা যে বক্তব্য রেখেছেন, আমি একেবারেই তার সঙ্গে সহমত না।"
আরও পড়ুন: 'বিদায়, নতুন বন্ধু...!' কেকে-র অদেখা ভিডিও শেয়ার করে আবেগপ্রবণ সৃজিত
সঙ্গীতশিল্পী সিধু (Sidhu) বলেন, "আমার মনে হয়েছে রূপঙ্কর যে কারণে কথাগুলো বলেছেন সেটা হচ্ছে, বোম্বে বা বলিউড গান নিয়ে মাতামাতির মাঝে আমরা বাংলা গানকে যেন না ভুলে যাই। আমার মনে হয় ওঁর উদ্দেশ্য এরকম ছিল। হয়তো উপস্থাপনা একটু কঠিন ও রুক্ষ হয়ে গেছে। নিশ্চয় বলিউডের গান ভাল, সেখানে ভাল শিল্পীরা রয়েছেন, কিন্তু সেগুলো নিয়ে মাতামাতি করতে গিয়ে আমরা যেন বাংলা গানকে ভুলে না যাই, ওঁর এই বক্তব্যর সঙ্গে আমি সহমত।"
তিনি আরও যোগ করেন, "ইদানিং এফএম চ্যানেলগুলিতেও বাংলা গান বাজানো প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, সেটা কিন্তু দক্ষিণ ভারতের ক্ষেত্রে হয় না। তাই বলিউডের যে সংস্কৃতি সেগুলো নিশ্চয় থাকুন, কিন্তু সেগুলোর ভিড়ে যেন নিজেদের সংস্কৃতি, আমাদের বাংলা গান না হারিয়ে যায়। সেই সঙ্গে এটাও বলব, 'হু ইজ কেকে'- এই মন্তব্য আমি একেবারেই সমর্থন করি না।"
আরও পড়ুন: মৃত্যুর আগে কলকাতায় KK-র কিছু মুহূর্ত, মন খারাপ করা সেই ছবিগুলি
অন্যদিকে সঙ্গীতশিল্পী উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায় (Ujjaini Mukherjee) বলেন, "রূপঙ্করদা কর্ম সূত্রে আমার ভীষণ কাছের মানুষ। উনি যেটা শেয়ার করেছেন, সেটা নিজের পেজে। তবে হ্যাঁ সময়টা খুব খারাপ হয়ে গেছে, যার জেরে এত ট্রোল্ড হচ্ছেন। ওঁর ফ্যান বা যারা অশ্রাব্য গালিগালাজ করছেন, তাদের আমার একটাই কথা বলার আছে, রূপঙ্করদা নিজের পেজে নিজের মতামত শেয়ার করেছেন এবং এরকম ভিডিও উনি বানিয়েই থাকেন। স্পষ্ট কথা বলে, নিজের মতামত শেয়ার করেন। নিজের পেজে, নিজের কথাই মানুষ বলে।"
আরও পড়ুন: রবীন্দ্রসদনে আনা হল KK-র মরদেহ, গান স্যালুটে বিদায়, রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী
উজ্জয়িনী যোগ করেন, "আমি ওঁকে বহু বছর ধরে চিনি। আমার মত যারা ওঁকে চেনেন, তারা সবাই এটাই বলবেন যে, উনি আগে খুব একটা কথাবার্তা বলতেন না। সোশ্যাল মিডিয়া আসার পর আমরা বাধ্য হই অনুগামীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে। মাঝে মধ্যে নিজের স্বভাব বিরুদ্ধ আচরণও করতে হয়। সেটাও একটা বড় কারণ। দুঃখের কথা গানের ভিডিও থেকে, এই ভিডিওগুলো বেশি চলে। অনেকে আমার কমেন্ট বক্সে এসেও কমেন্ট করে যাচ্ছেন। আমায় প্রশ্ন করছেন উনি কেন এটা বললেন? আমি তো সেই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে পারি না। এটা ওঁর নিজস্ব মতামত। রূপাঙ্করদা-কে এমনি এমনি এত জায়গায় বিচারক আসনে বসানো হয় না। যারা আজ গালিগালাজ করছেন, তখন তারাই ওঁর মতামতের গুরুত্ব দেন। যেভাবে ট্রোল করা হচ্ছে, আমি কোনও ভাবেই সেটাকে সমর্থন করি না। মুহূর্তের মধ্যে কোনও বাদামওয়ালাকে নিয়ে এমন নাচানাচি করে, ঠিক তার পরের মুহূর্তে কাকে কী বলছে সেটার হুঁশ হারিয়ে ফেলবে মানুষ, এটা ঠিক না। এটা হতে পারে না।"
আরও পড়ুন: 'ছোটি সি হ্যায় জিন্দেগি...' কেকে-র সেরা ১০ গান সকলের মনে থাকবে আজীবন
প্রসঙ্গত, বুধবার খুনের হুমকি এসেছে বলেও থানায় অভিযোগ করেন রূপঙ্কর বাগচী ও তাঁর স্ত্রী চৈতালী লাহিড়ী। শোনা যাচ্ছে, অভিযোগ পাওয়া মাত্রই, থানার তরফ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রূপঙ্কর বাগচীর বাড়িতে গিয়ে, চারপাশের পরিস্থিতি ঘুরে দেখে পুলিশ। সেই সঙ্গে যে সমস্ত নম্বর থেকে হুমকি এসেছে, তার নেপথ্যে কারা রয়েছেন, সে বিষয় তদন্ত শুরু হয়েছে প্রশাসনের তরফে।