
২৬ তারিখে ভোট ভবানীপুরে। খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কেন্দ্র। ১৯৫৭ ও ১৯৬২ সালে এই কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়। ২০১১ সালে বাম সরকারের পতনের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন সাংসদ। সে বারও মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য ভবানীপুর আসনকেই বেছে নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সহজ থেকে কঠিন
২০১১ সালের উপনির্বাচনে ভবানীপুরে ৫৪ হাজার মার্জিনে ভোটে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৬ সালে এই ভবানীপুরেই জিতেছিলেন ঠিকই, কিন্তু জয়ের মার্জিন অনেকটাই কমে যায়। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ওই বিধানসভা কেন্দ্রেই তৃণমূলের থেকে ১৮৫টির বেশি ভোটে লিড ছিল বিজেপির। ২০১৯ সালে ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে বিজেপি, তৃণমূলের চেয়ে সামান্য কম।
২০২১-এর নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবানীপুর আসনে প্রার্থী নন। নন্দীগ্রামের প্রার্থী। প্রসঙ্গত, ভবানীপুর কেন্দ্রে অবাঙালি জনসংখ্যা বেশি। এই ভোটব্যাঙ্কটা একটা সময় তৃণমূলেরই ছিল। গত কয়েক বছরে তারা বিজেপির দিকে ঝুঁকেছে। সেই ট্রেন্ডই বজায় আছে কিনা, তা বোঝা যাবে ২০২১ সালের নির্বাচনের ফলে।
সপ্তাম দফায় ভোট হবে ভবানীপুরে। এছাড়াও দক্ষিণ দিনাজপুরের ৬টি আসনে, মালদায় ৬টি, মুর্শিদাবাদে ১১টি ও পশ্চিম বর্ধমানে ৯টি আসনে ভোট।
দিদির জন্য কঠিন দফা
সপ্তম দফাই সম্ভবত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলের জন্য সবচেয়ে কঠিন দফা। দুর্বল খেলোয়াড় নিয়ে মাঠে নামছে তৃণমূল। ২০১৬ সালে এই অঞ্চলটিতে তৃণমূলের ভোট শেয়ার ছিল ৩৭ শতাংশ, বাম-কংগ্রেসের ছিল ৪৪ শতাংশ। ২২টি আসনের মধ্যে বাম-কংগ্রেস পেয়েছিল ১৪টি আসন। বিজেপি একটি আসনও জেতেনি। কিন্তু ২০১৯ সালে চিত্রনাট্যটা পরিবর্তন হয়ে গেল। বিজেপি-র ১৬টি বিধানসভা আসনে লিড ছিল। বিজেপির ৩৭ শতাংশ ভোট শেয়ার ছিল, তৃণমূলের ৩৯ শতাংশ। খুব সামান্যই ব্যবধান। মালদা, মুর্শিদাবাদ কংগ্রেসের শক্তঘাঁটি হওয়া সত্ত্বেও কংগ্রেসের খারাপ ফল হয়েছিল।
মুর্শিদাবাদে মুসলিম ফ্যাক্টর
মুসলিম অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদে সংখ্যালঘু ভোট কোন দিকে যাবে, সেই দিকে তাকিয়ে রয়েছে সকলেই। মুর্শিদাবাদ ও প্রতিবেশী মালদার ভোট কংগ্রেসের দিকেই গিয়েছে এতদিন। এবারও বামদের সঙ্গে জোট করে ওই দুই জেলায় ভাল ফলেরই আশা করছে কংগ্রেস। কিন্তু মুসলিম ভোট ভাগ হয়ে গেলেই অঙ্ক অন্যরকম হয়ে যাবে।
তৃণমূলের শক্তঘাঁটি
কলকাতা পোর্ট আসনটি তৃণমূলের অত্যন্ত শক্তঘাঁটি। দলের প্রার্থী ফিরহাদ হাকিম রাজ্যের মন্ত্রীও। ২০১৬ সালে তিনি ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটেও এই আসনে তৃণমূল রেকর্ড ৫৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এবারও কি সেই ধারাই বজায় থাকবে?
বিজেপির শক্তঘাঁটি
আসানসোল উত্তর আসনটি সপ্তম দফায় বিজেপির শক্ত ঘাঁটি। ২০১৯ সালের লোকসভায় এই বিধানসভা আসনটিতে ২০ হাজারের বেশি ভোটে লিড ছিল বিজেপির। এই এলাকাতেও একটি বড় অংশ অবাঙালি। এই অঞ্চলে তৃণমূলের দুঁদে নেতারা দলত্যাগ করাতেও চাপে তৃণমূল।
কলঙ্কিত প্রার্থীরা
অন্যান্য দফাগুলির মতো, সপ্তম দফাতেও প্রচুর প্রার্থীর বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল কেস রয়েছে। তিন জন প্রার্থী খুনের মামলায় অভিযুক্ত। ১৪ জনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা রয়েছে, ADR-এর তথ্য অনুযায়ী।
কার ভাঁড়ারে কত?
ADR রিপোর্ট অনুযায়ী, মোট প্রার্থীদের ২৩ শতাংশের সম্পত্তি ১ কোটি টাকার উপরে। তৃণমূলের ৭৭ শতাংশের ১ কোটি টাকার উপরে সম্পত্তি, কংগ্রেসের ৫৮ শতাংশ ও বিজেপির ৩৭ শতাংশ প্রার্থী কোটিপতি।
প্রতিবেদক: আশিস রঞ্জন ও জয়ন্ত ঘোষাল