২০১৯ সালের ১৪ অগস্ট দিল্লিতে গিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার হাত থেকে গেরুয়া পতাকা নিয়েছিলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন তাঁর বিশেষ বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তবে প্রায় দেড় বছরের এই দীর্ঘসময়ে কখনই বিজেপিতে সক্রিয় ভাবে দেখা যায়নি শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। যেখানে মাত্র কয়েকদিন হল বিজেপিতে যোগ দিয়েই একের পর এক জনসভা করে চলেছেন শুভেন্দু অধিকারী সেখানে একেবারেই নিষ্প্রভ শোভন চট্টোপাধ্যায়। মাঝে তিনি ফের পুরনো দলে ফিরতে পারেন এমন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছিল। এই আবহেই গত সোমবার কলকাতার প্রাক্তন মেয়রের মেগা কামব্যাক ঘটাতে রোড শোর পরিকল্পনা নিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু শেষপর্যন্ত তীরে এসে তরি ডুবেছিল। চরম বিড়াম্বনায় পড়তে হয়েছিল কৈলাস বিজয়বর্গীয়র মত কেন্দ্রীয় নেতাদের। শেষপর্যন্ত মিছিল শেষ করতে ময়দানে নামতে হয়েছিল মুকুল রায়, কৈলাস বিজবর্গীয়, অর্জুন সিং-দের। এই আবহে ১১ ডিসেম্বর সপ্তাহের শুরুতে ফের গেরুয়া শিবিরের মিছিলে পা মেলাতে চলেছেন শোভন-বৈশাখী এমনটাই শোনা যাচ্ছে। মিছিলের আগের দিন সন্ধ্যায় হেস্টিংসে বিজেপির নবনির্মিত নির্বাচনী কার্যালয়ে শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি সেই জল্পনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
শোনা যাচ্ছে সোমবার গোলপার্ক থেকে সেলিমপুর অবধি বিজেপির মিছিল রয়েছে। সেই মিছিলে শোভন-বৈশাখী থাকবেন বলেই জানা যাচ্ছে। তবে এক সপ্তাহ আগের অভিজ্ঞতা বিজেপি নেতৃত্বের কাছে এখনও টাটকা। তাই রাজ্য নেতৃত্বকে এখনও এই বিষয়ে খুব একটা উৎসাহ প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে না। সোমবারের মিছিলে সেই কারণে রাজ্যস্তরের কোনও নেতার উপস্থিত থাকার সম্ভাবনাও কম। এমনকি কলকাতা জোনের সব নেতাও নাও থাকতে পারেন। বিজেপি সূত্রে যেটুকু জানা যাচ্ছে তাতে সোমবার শোভন-বৈশাখীকে নিয়ে যে মিছিল হবে সেটা শুধুই দলের দক্ষিণ কলকাতা সাংগঠনিক জেলার কর্মসূচি। তবে এদিন বৈঠক শেষে বেরিয়ে শোভন চট্টোপাধ্যায় আশ্বাস দিলেন সোমবারের কর্মসূচিতে তিনি অংশ নিচ্ছেন। থাকবেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এদিন হেস্টিংসে কৈলাস বিজয়বর্গীয় সহ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন শোভন। নির্বাচনের আগে দক্ষিণ কলকাতা সাংগঠনিক সংগঠনকে কীভাবে আরও শক্তিশালী করে তোলা যায় তাই নিয়েই স্ট্র্যাটেজি বৈঠক বলে নিজেই জানান শোভন চট্টোপাধ্যায়।
শোভন চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে যে মেগা ব়্যালির পরিকল্পনা গত সোমবার বিজেপি করেছিল তা একেবারে ফ্লপ শোতে পরিণত হয়েছিল। গত মিছিলের আগেই বৈশাখী জানিয়েছিলেন তিনি বিজেপির বাইক ব়্যালিতে যাবেন না। পরে শোভনও বান্ধবীর মতোই বেঁকে বসেন। শোভনের গোলপার্কের ফ্ল্যাটে গিয়েও সেবার বরফ গলাতে পারেনি বিজেপি নেতৃত্ব। এরপরেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ কড়া প্রতিক্রিয়া দেন। শোনা যাচ্ছিল শোভন-বৈশাখীর বিরুদ্ধে বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে বিজেপি। দলীয় সূত্রে জানা যায়, মুরলীধর সেন লেনে, রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে বিজেপি কার্যালয়ে শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে একটি ঘর বরাদ্দ ছিল। গত সোমবার শোভন-বৈশাখী মিছিলে না আসার পরই সেই ঘরে তালা পড়ে যায়। এরপরেই বৈশাখী প্রতিক্রিয়া দেন, সেদিন তাঁর শরীর অত্যন্ত খারাপ ছিল। পা ফোলা থাকায় চলাফেরাও অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। সেকারণেই সোমবার বিজেপির মিছিলে যেতে পারেননি। এবং শোভনের না যাওয়ার কারণ হিসাবে বৈশাখীর সাফাই ছিল, শোভনও অসুস্থ ছিলেন এবং বাড়িতে আর কোনও বয়োঃজেষ্ঠ্য না থাকায় বৈশাখীকে একা ফেলে যেতে পারেননি। এদিনের বৈঠক শেষে বেরিয়ে অবশ্য সাংবাদিকদের সামনে দলে থাকা না থাকা নিয়ে সব জল্পনা দূর করে দেন শোভন। জানিয়ে দেন তিলি আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ কলকাতার গেরুয়া শিবিরের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে ময়দানে নামছেন। বিজেপির কেন্দ্রীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কনভয়ে হামলার সমালোচনা করতেও দেখা যায় তাঁকে। সাফ বলেন, তৃণমূলের আত্মসমালোচনা করা উচিত। নইলে মুকুল রায়ের মত নেতাদের দল ছাড়তে হত না। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে কলকাতার ১১টি আসন তো বটেই, শোভনের নেতৃত্বেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৩১টি আসনের মধ্যে ২৯টিতে জয় পেয়েছিল তৃণমূল। একুশের ভোটে শোভনের হাতে সেই সমস্ত এলাকার দায়িত্বই তুলে দিয়েছে বিজেপি। এখন দেখার সোমবার ময়দানে নেমে সেই দায়িত্ব কীভাবে সামলাবেন একদা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ শোভন চট্টোপাধ্যায়।