রেড পান্ডাদের বাঁচাতে ভারত এবং পড়শি দেশগুলো একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সীমানা পেরিয়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এমনই মনে করেন কলকাতার জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (জেডএসআই)-এর বিজ্ঞানীরা
তাঁরা আরও জানাচ্ছেন
পিআইবি-র তরফ থেকে জানানো হয়েছে, বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ভারত, চিন, নেপাল এবং ভুটানের আমলা, স্থানীয় স্টেকহোল্ডার, পরিবেশবিদ, জীববিজ্ঞানী, এনজিও এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সক্রিয় অবদানকে যুক্ত করে একটি আন্তঃসীমান্ত পর্যবেক্ষণ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। এবং একটি শক্তিশালী আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছেন। রেড পান্ডাদের বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে এই কাজ করতে হবে। জেডএসআই বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সেটা বিপন্ন প্রজাতি। কারণ সেগুলো চোরাচালানের ক্রমাগত হুমকির মধ্যে রয়েছে। পাশাপাশি সাম্প্রতিক তাপমাত্রার পরিবর্তন এবং নৃতাত্ত্বিক কার্যকলাপও এর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
জেডএসআইয়ের গবেষণা
জেডএসআই -এর সেন্টার ফর ডিএনএ ট্যাক্সোনমির বিজ্ঞানী ডাঃ মুকেশ ঠাকুর এবং ওই প্রতিষ্ঠানের আরও কয়েকজন বিজ্ঞানী এ ব্যাপারে গবেষণা করেছেন। গবেষণার পরে কাঞ্চনজঙ্ঘা ল্যান্ডস্কেপ (কেএল বা KL)-এ সিকিম, উত্তরবঙ্গ-সহ এর রেড পান্ডা এদিক-সেদিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন: গোসাবায় বাঘের হানা, মেরেছে গরু-ছাগল, আতঙ্কে কাঁপছেন স্থানীয়রা
মুকেশ ঠাকুর জানান, কেএল-এ রেড পান্ডা জনসংখ্যার বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন। কারণ এটি একটি মধ্যবর্তী জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করে যা পশ্চিমে নেপাল এবং পূর্বে ভুটানের সঙ্গে সংযুক্ত।
ডাঃ ঠাকুরের মতে, রেড পান্ডা উত্তরবঙ্গ, সিকিম এবং অরুণাচলে রয়েছে। এর সংখ্যার ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনও তথ্য পাওয়া মুশকিল। যাই হোক, আগের রিপোর্টগুলো বলছে, পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানে ৩২টি এবং নেওড়া ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে ৩৪টি প্রাণীর রেড পান্ডা রয়েছে।
১৯৯৪ সালে দার্জিলিং চিড়িয়াখানায় একটি রেড পান্ডা সংরক্ষণ প্রজনন কর্মসূচি শুরু করে। ২০০৩ সাল নাগাদ সেখানে ২২টি রেড পান্ডা ছিল। এবং চিড়িয়াখানায় জন্ম নেওয়া দু'টি মেয়ে রেড পান্ডাকে বনের মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, ২০০৪ সালে। আরও দুটি মেয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল এবং ২০১৯ সালের অক্টোবরে আরও চারটি পান্ডা মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল।
আরও পড়ুন: সেচের জল থেকে ধানে যাচ্ছে আর্সেনিক, ভাত কতটা নিরাপদ?
এই প্রচেষ্টা সত্ত্বেও জাতীয় উদ্যানে রেড পান্ডার জনসংখ্যা বৃদ্ধির কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বাসস্থানের উপযোগিতার জন্য, বৃষ্টিপাত, গাছপালা এবং তাপমাত্রার মতো পরিবর্তনগুলি সরাসরি রেড পান্ডার খাদ্য, বেঁচে থাকা এবং প্রজনন প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে যুক্ত। নাতিশীতোষ্ণ বনাঞ্চলে বাঁশের বৃদ্ধি বৃষ্টিপাত এবং তাপমাত্রার কারণে অত্যন্ত প্রভাবিত হয়। এবং রেড পান্ডারা ছাউনিতে বসবাসকারী প্রজাতি। এই কারণে মধ্য ও পূর্ব হিমালয়ের নাতিশীতোষ্ণ বনে ঘন বাঁশের জায়গায় থাকতে পছন্দ করে। রেড পান্ডা বাসস্থানের জন্য বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা এবং গাছপালা আবরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
জেডএসআই বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই সংরক্ষিত এলাকা (PAs)-র সীমানা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। ভারত সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রকের গৃহীত পরিবেশ-সংবেদনশীল অঞ্চল পরিকল্পনা কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে। গুরুত্বপূর্ণ বন্যপ্রাণী করিডোর রক্ষার জন্য তারা PA এবং সম্প্রদায় সংরক্ষণ এলাকার চারপাশে বাফার জোনের প্রস্তাব করেছে।
একসঙ্গে কাজ করতে হবে
রেড পান্ডা বিগত কয়েক দশকে ভূমি ব্যবহারের ধরন, নৃতাত্ত্বিক ক্রিয়াকলাপের পরিবর্তনের কারণে আবাসস্থলের ক্ষতি, খণ্ডিতকরণ এবং সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, রেড পান্ডা সংরক্ষণের জন্য একটি বিস্তৃত পর্যবেক্ষণ পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে হবে। এ কাজে নেপাল, ভুটান এবং চিনের সম্ভাব্য সহযোগিতা চেয়েছেন।