Arsenic Concentration in Asian Paddy Soil: আর্সেনিক (As) একটি বিষাক্ত, কার্সিনোজেনিক পদার্থ। এই মেটালয়েড প্রাকৃতিকভাবে স্থলজ এবং জলজ পরিবেশে থাকে। আর্সেনিকের প্রধান বাহক পানীয়ের জন্য ব্যবহৃত দূষিত ভূগর্ভস্থ জলের মাধ্যমে। যা স্বাস্থ্যের ক্ষতিকারক প্রভাবগুলির সঙ্গে। এই বিষাক্ত রাসায়নিকটি দুনিয়ার ২০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে প্রভাবিত করেছে। এটি গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশ এবং ভারতে জনস্বাস্থ্য একটি প্রধান উদ্বেগের কারণ।
আরও পড়ুন: Ola-Uber-কে টেক্কা দিতে কলকাতার অ্যাপ-ক্যাব চালকেরা আনলেন ryde!
আরও পড়ুন: Haringhata Live! মুরগি বেছে নিন, কাটাকুটি হবে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে
চিন্তার ছবি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু বা WHO) পানীয় জলের জন্য প্রতি লিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম বা ১০ μg L−1(ppb)-এর একটি মান স্থাপন করেছে। যদিও দূষিত সেচের জল খাদ্য শস্যের মধ্যে আর্সেনিকের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এক্সপোজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেচের জলের জন্য WHO বা অন্য কোনও আন্তর্জাতিক নির্দেশিকা মান আজ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
আরও পড়ুন: ধান-ধনুক আর নাচ-গানে বাংলার মেয়েদের কার্তিক পুজো, লোকগানে লুকিয়ে সে ইতিহাস
আরও পড়ুন: জাতীয় পতাকায় পরিবর্তন চেয়েছিলেন সত্যজিৎ, কারণ জানেন?
ভাত নিয়ে প্রশ্ন
ভাত যা বিশ্ব জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি, বিশেষ করে এশিয়ান, আফ্রিকান এবং লাতিন আমেরিকার দেশগুলির জন্য একটি প্রধান খাদ্য। ভারত ও বাংলাদেশে চালের দৈনিক ব্যবহার বেশি। আনুমানিক মাথাপিছু বছরে ১০৩ এবং ২৬৮ কেজি। বাংলাদেশে আনুমানিক ৭৩ শতাংশ ক্যালোরি এবং ভারতে ৩০ শতাংশ ক্যালোরি চাল থেকে আসে। চাল একটি সমৃদ্ধ খাদ্য। যা কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ-সহ ফাইবার পরিপূর্ণ এবং পুষ্টির উৎস। এই কারণে ধানের ব্যবহারও আর্সেনিক (As) এক্সপোজারের একটি প্রধান পথ হতে পারে।
আরও পড়ুন: এই মাছের ৫৫৫টি দাঁত! রোজ ২০টা ভাঙে আবার গজায়...
আরও পড়ুন: SRFTI-তে বসতে চলেছে সত্যজিৎ রায়ের মূর্তি, জন্মশতবর্ষে শ্রদ্ধা
মাটি আর্সেনিক (As)-এর একটি উল্লেখযোগ্য সিঙ্ক হিসাবে কাজ করে, এবং দূষিত জমিতে ধান চাষ শিকড়ের মধ্যে দিয়ে আর্সেনিককে চালের মধ্যে চালিত করে। অন্যান্য শস্যের তুলনায় ধানের উদ্ভিদ প্রধান আর্সেনিক সঞ্চয়কারী এবং দূষিত জল সেচের সাহায্যে ধান চাষ করলে, ধানের মাটি, ধানের খড় এবং শস্যে আর্সেনিক বৃদ্ধি পায়। এশিয়ায় ধান হল ৫৬০ মিলিয়ন দরিদ্র সহ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যার জন্য মৌলিক প্রধান খাদ্য।
চাল উৎপাদক দেশগুলো
২০১৮-১৯ সালে চিনে ১৪৬.৭ মিলিয়ন টন এবং ভারতে ১০২ মিলিয়ন টন চাল খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল। চিন ছাড়াও ভারত এবং অন্যান্য প্রধান চাল উৎপাদনকারী দেশগুলি হল বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড এবং ফিলিপিন্স। বিশ্বব্যাপী চাল উৎপাদনের ৮০%-এরও বেশি এখানে উৎপাদিত হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই অঞ্চলগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি দূষিত। চাল যেহেতু আর্সেনিকের প্রধান উৎস, তাই বিভিন্ন দেশ ধানের শীষের মতো সর্বাধিক সহনীয় সীমা নির্ধারণ করেছে।
যৌথ FAO-WHO কোডেক্স অ্যালিমেন্টারিউস কমিশন অজৈব আর্সেনিক সর্বাধিক মাত্রা পালিশ করা চালে প্রতি কেজিতে ০.২ মিলিগ্রাম বা ০.২ মিগ্রা kg−1 এবং ভূষি চালে ০.৩৫ মিলিগ্রাম বা ০.৩৫ kg−1 সুপারিশ করেছে । কিন্তু ধানের মাটি এবং সেচের জলকে কেন্দ্রীভূত করে তার সীমা নির্ধারণের সীমিত প্রচেষ্টা হয়েছে। যার ওপরে ধানের সর্বাধিক প্রস্তাবিত মাত্রা অতিক্রম করা যেতে পারে। এই পরিপরেক্ষিতে একটি মেটা-বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করে মাটি এবং সেচের জলে আর্সেনিক নির্ধারণ করার চেষ্টা করা হয়েছে।
যে সীমার ওপরে এশিয়ান ধানের ক্ষেতে চাষ করা ধানের দানা অজৈব আর্সেনিক পালিশ করা চালে ০.২ মিলগ্রাম প্রতি কেজিতে বা ০.২ মিগ্রা kg−1 এবং ভুসি ধানের ০.৩৫ মিলিগ্রাম প্রতি কেজি (০.৩৫ মিগ্রা kg−1) সর্বাধিক সহনীয় মাত্রা অতিক্রম করতে পারে। এই গবেষণাপত্রে ধানের মাটি, সেচের জল, এবং এশিয়ান দেশগুলিতে চাষ করা ধানের শস্যের আর্সেনিক হিসাবে রিপোর্ট করা প্রকাশিত নিবন্ধগুলি পদ্ধতিগতভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে ৷
এই পদ্ধতিতে ISI ওয়েব অফ সায়েন্স এবং পাবমেড অনুসন্ধান করে গবেষকরা ১৯৮০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রকাশিত প্রাসঙ্গিক গবেষণাপত্রগুলি চিহ্নিত করেছেন। পর্যালোচনা করা ১৫৬টি গবেষণাপত্র থেকে ২৬টি গবেষণা (ভারত থেকে ১৫টি, তাইওয়ান থেকে একটি, নেপাল থেকে একটি, ভিয়েতনাম থেকে একটি, চিন থেকে একটি এবং বাংলাদেশ থেকে ৭টি) মেটা-বিশ্লেষণের জন্য অন্তর্ভুক্তির মানদণ্ড পূরণ করেছে। এই সমস্ত গবেষণায় ধানের শস্য, মাটি এবং সেচের জলে আর্সেনিক রিপোর্ট করা হয়েছে।
একটি সাধারণ রৈখিক রিগ্রেশন মডেল ব্যবহার করে দেখা গিয়েছে যে সেচের জলের তুলনায় মাটির আর্সেনিক ধানের আর্সেনিক মাত্রাকে বেশি প্রভাবিত করে ডিসিশন ট্রি মডেলের ওপর ভিত্তি করে মাটি এবং সেচের জলকে স্বাধীন পরিবর্তনশীল হিসাবে ব্যবহার করে নির্ধারণ করা হয়েছ যে এশিয়ান ধানের মাটি ১৪ মিলিগ্রাম/কেজি-র বেশি আর্সেনিক ফলে ধানের দানা কোডেক্সের প্রস্তাবিত সর্বাধিক অনুমোদিত অজৈব হিসাবে (i-As) ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষণা দলের সদস্য যযাতি মন্ডল।
মাটির দায়
লজিস্টিক রিগ্রেশন এবং ডিসিশন ট্রি মডেল- দু'টোই মাটিকে প্রধান নির্ধারক ফ্যাক্টর হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং সেচের জল একটি অ-উল্লেখযোগ্য ফ্যাক্টর হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সেচের জলের জন্য কোনও নির্দেশিকা মান নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। এই গবেষণায় উদ্ভূত শস্যের আর্সেনিক মাত্রার ওপর সেচের জলের অপ্রয়োজনীয় প্রভাবের সম্ভবত কারণ হল সেচের জলের আর্সেনিক মাটির মাধ্যমে ধানের শীষে স্থানান্তরিত হয়।
সেচের জল
উদাহরণস্বরূপ সেচের জল থেকে মাটিতে আর্সেনিক জমা হওয়া বিভিন্ন কারণের ওপর নির্ভর করে। যেমন ফসল বৃদ্ধির সময়কাল জুড়ে মাটিতে আর্সেনিক সাময়িক পরিবর্তন, সেচের জলের পরিমাণ এবং কতবার জমিতে সেচ দেওয়া হচ্ছে। এই গবেষণা থেকে নির্ধারিত মাটির আর্সেনিক সীমা বাংলাদেশের সমীক্ষার সঙ্গে একমত। যা ধানের শীষে আর্সেনিক জমা এবং বিতরণের তদন্ত করে এবং প্রতিবেদন করে যে ১৪.৫ ± ০.১ মিলিগ্রাম/কেজি দূষিত মাটিতে জন্মানো চাল মানুষের ব্যবহারের জন্য নিরাপদ নয়।
তা ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০ মিলিগ্রাম প্রতি কেজি মাটিতে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য সীমার সুপারিশ করেছে। এর পাশাপাশি জাপানের পরিবেশ ধানের মাটিতে ১৫ মিলিগ্রাম প্রতি কেজি আর্সেনিকের সীমার সঙ্গেও একমত পোষণ করে। এই ফলাফলগুলি পরামর্শ দেয় যে বর্তমানে এশিয়ায় ধান চাষের জন্য উপলব্ধ বৈজ্ঞানিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে, ধানের মাটিতে ১৪ মিলিগ্রাম প্রতি কেজির একটি নির্দেশিকা মান উপযুক্ত হতে পারে।
উপলব্ধ তথ্য (মেটা ডেটা) এবং মডেলগুলির অনিশ্চয়তা এবং সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে শস্য চালের সঙ্গে আরও উপযুক্ত মাটি এবং সেচের জলের নমুনা সংগ্রহের পরীক্ষামূলক গবেষণা এবং ধানের মাটিতে মোট আর্সেনিকের পরিবর্তে উদ্ভিদ উপলব্ধ আর্সেনিকের বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন গবেষকদেলর অন্যতম সদস্য দেবপ্রিয়া মণ্ডল।
গবেষকদল
এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ফ্রন্টিয়ার্স ইন এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স জার্নালে। এই কাজের সঙ্গে যৌথভাবে যুক্ত রয়েছেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুদীপ সেনগুপ্ত, আইআইটি খড়্গপুরের প্রফেসর অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় এবং গবেষক সৌম্যজিৎ সরকার এবং ব্রিটেনে (UK)-এর সালফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক যযাতি মন্ডল, প্রফেসর মাইক উড, প্রফেসর সাইমন হাচিনসন। লন্ডনের সেন্ট জর্জ ইউনিভার্সিটির পরিবেশগত মহামারী বিশেষজ্ঞ দেবপ্রিয়া মণ্ডল এই গবেষণাপত্রের সঙ্গে যুক্ত।