'প্রাক্তন'! শব্দটা শুনলেই কেউ ভেসে যান নস্টালজিয়ায় তো কেউ আবার ডুব দেন দুঃখের সাগরে। কারও আবার এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একরাশ রাগ-অভিমান।
চলচ্চিত্র পরিচালকদ্বয় নন্দিতা রায় (Nandita Roy) ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (Shiboprosad Mukherjee), তাঁদের প্রায় প্রতিটি ছবিই এক অন্য সুতোয় গাঁথেন। মানবিক ছবিতেও উঠে আসে পারিবারিক রোজনামচার খুব চেনা ক্রাইসিস, যা দেখে যেন মনে হয় ঠিক পাশের বাড়ির গল্প। থাকে এক বিশেষ বার্তা। এরকমই এক অন্য ধারার ছবি 'প্রাক্তন' (Praktan) যখন 'উইন্ডোজ প্রোডাকশনস' (Windows Productions) থেকে মুক্তি পেল ২০১৬ সালে, বলাই বাহুল্য দর্শকেরা নিজেদের জীবনের সঙ্গে অনেকটাই মেলাতে পেরেছিলেন। বক্স অফিসে সুপারহিট এই ছবি তাই আজও প্রশংসিত।
আজকের দিনেই অর্থাৎ ২৭ মে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল 'প্রাক্তন'। এরপর কেটে গেছে ৫ বছর। আজও উজান, সুদীপা বা মালিনীকে মনে রেখেছেন সকলে। ছবি সংলাপ, চিত্রনাট্য থেকে শুরু করে প্রতিটা গান এক অন্য অনুভূতি এনেছিল সকলের মনে। তবে এই ছবির নেপথ্য কাহিনী অনেকেই অজানা।
নয়ের দশকের সেরা জুটি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (Prosenjit Chatterjee) ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত (Rituparna Sengupta) ২০০১ সালে ঠিক করলেন তাঁরা আর একসঙ্গে কাজ করবেন না। এরপর তাঁদের একই ছবিতে অভিনয় করানোর জন্য বহু পরিচালক- প্রযোজকের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। কিন্তু কাজটি করে দেখিয়েছিলেন শিবপ্রসাদ - নন্দিতা। প্রায় দীর্ঘ ১৫ বছর পর প্রেমের গল্পে ফের এক ফ্রেমে প্রসেনজিৎ- ঋতুপর্ণা! এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে ছিলেন অপরাজিতা আঢ্য (Aparajita Adhya)। সেই সঙ্গে অভিনয় করেছেন একঝাঁক গুণী শিল্পীরা। প্রথম থেকেই ছবি ঘিরে তাই ছিল উত্তেজনা।
তবে খুব কম মানুষই জানেন, শুরুতে ছবিতে প্রসেনজিৎ-র স্ত্রী অর্পিতা চট্টপাধ্যায়ের (Arpita Chatterjee) অভিনয় করার কথা ছিল। অর্থাৎ উজানের দ্বিতীয় স্ত্রী মালিনীর চরিত্রে অপরাজিতার জায়গায় প্রথমে অর্পিতা অভিনয় করবেন বলেই ঠিক ছিল। কিন্তু এরপর গল্প ও চিত্রনাট্য পুরোটা তৈরি হওয়ার পর ছবির নির্মাতারা মনে করেন এই চরিত্রে অপরাজিতাকে বেশি ভাল মানাবে। আর সেই জন্য তাঁরা এবিষয়ে অর্পিতার সঙ্গে কথা বলেন এবং অভিনেত্রী বোঝেন বিষয়টা। মালিনী ওরফে মলি চরিত্রে অপরাজিতা দর্শকদের মন জয় করতে সফল হন।
আরও পড়ুন: JU-র রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র আজ সফল চলচ্চিত্র নির্মাতা! জন্মদিনে শিবপ্রসাদ
'প্রাক্তন' ছবির গান 'তুমি যাকে ভালোবাসো' (Tumi Jake Bhalobaso) এই শতাব্দীর সেরা গানগুলির মধ্যে একটি বলেই মনে করা হয়। গানটির পুরুষ ও মহিলা কণ্ঠের জন্য জাতীয় পুরস্কার পায়। গেয়েছেন অনুপম রায় (Anupam Roy) ও ইমন চক্রবর্তী (Iman Chakraborty) । প্রথম থেকেই কথা ছিল এই গানের মহিলা কণ্ঠে থাকবেন কোনও নবাগত গায়িকা। গানের কথা ও সঙ্গীত পরিচালনা দুটিই অনুপমের। তিনি দু'জন গায়িকাকে দিয়ে গানটি গাইয়ে, তাঁদের নাম না বলেই পাঠিয়েছিলেন পরিচালকদের কাছে। আর সেখান থেকেই ইমনের গানটি বেছে নেন তাঁরা। আর তারপরে সবটাই ইতিহাস। মজার কথা হল, এখনও পর্যন্ত শিবপ্রসাদ বা নন্দিতা জানেন না, আরেকজন শিল্পী কে ছিলেন।
আরও পড়ুন: 'অটোগ্রাফ'-ই জীবনের বড় ব্রেক অনুপমের
ছবিতে প্রসেনজিৎ ও ঋতুপর্ণার চরিত্রটি আসলে একটি রিয়েল লাইফের জুটির থেকে অনুপ্রাণিত। ঋত্বিক চক্রবর্তী ও মধুরা এই দু'জনের জীবনের গল্পের অনেকটাই পর্দায় দেখানো হয়েছে। ঋত্বিক আসলে একজন পরিচিত ট্যুর গাইড। আর তাঁর পেশাটি ভাল করে বুঝে, চরিত্রে ঢোকার জন্যেই কলকাতায় আয়োজিত একটি ট্যুরে অংশ নিয়েছিলেন প্রসেনজিৎ নিজে। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন একজন ট্যুর গাইডের চলন বলন কথার ধরন ঠিক কেমন। আর সেই হোম ওয়ার্কের প্রতিফলনই পর্দার উজান।