সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক রামায়ণ এই সমস্ত রামায়ণগুলি থেকে যে দর্শন,সেই দর্শনের বাল্মীকি রামায়ণ থেকেই নেওয়া এবং আরো যে আঞ্চলিক রামায়ণ তারও কাছ থেকে নেওয়া।সাধারণত রামায়ণে যুদ্ধ অনেক বড় হয়ে ওঠে। সুন্দরকান্ড জনপ্রিয়তা এবং ভক্তের আকর্ষণের আর একটা বড় কারণ রাভা এবং হনুমানের সম্পর্ক এবং কথোপকথনের একটা নির্যাস আছে।
কাশী শহরের ঘুম ভাঙে অনেক আগে। একটা ঘুম ভাঙ্গানীয়া সকাল। কাশী আমাকে কেন টানে জানি না। হয়তো পিতৃপুরুষেরা এখানে ছিলেন; এটাই হয়তো আমার শিকড়। আমার বাবার জন্ম এলাহাবাদে। ঠাকুরদাদা সব এই শহরেই ছিলেন। এখনও আমার পিতৃব্য অর্থাৎ বাবার খুড়তুতো ভাই এখানেই থাকেন।
আজ মহা ষষ্ঠী। ষষ্ঠীর দিন কাশীর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে ভোরবেলা সাড়ে তিনটের সময় উঠেছি। রামকৃষ্ণ আশ্রমের মুগ্ধ পরিবেশ। গাছ-গাছালি,তখন আকাশ অন্ধকার। মা দুর্গার ফল কাটা শুরু হয়ে গেছে।
সবচেয়ে মজার গপ্পোটা আজ আশ্রমে বললেন পরাশর মহারাজ। পরাশর মহারাজ এখন অতিথিশালার ভারপ্রাপ্ত। প্রত্যকবার এলেই ওঁর সঙ্গে একটু গল্প গুজব হয়। তা আমাকে বললেন, আপনি এই বারবার দিল্লি থেকে বেনারসের আশ্রমে চলে আসেন,আপনি একেবারেই চলে আসুন। একসঙ্গে এখানে থাকুনষ। সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে চলে আসুন। তারপর উনি বললেন -আপনি তো এখন অবসরপ্রাপ্ত। আপনার পিছুটান কোথায়? আমি বললাম অবসর পাচ্ছি কোথায়? অবসর নিতে চাইছি,কিন্তু সাংবাদিকতা পেশাটি এমনই যেন অবসর বলে কিছু হয় না।
এবার দুর্গা পুজো কাটাতে এসে গেলাম আবার কাশী,আবার রামকৃষ্ণ আশ্রমের অতিথিশালায়। কাল ষষ্ঠী, আজ পঞ্চমী। কাল রাত আটটায় শিবগঙ্গা এক্সপ্রেসে করে পৌঁছে গেলাম বারাণসী। ছটায় পৌঁছনোর কথা Before Time এ ট্রেন পৌঁছে গেছে।
শৈশব থেকেই মফস্বলের আবহাওয়ায় বেড়ে ওঠা। গ্রাম-মফস্বলে থাকলে পাড়া ও এলাকার সবার সঙ্গে সদ্ভাব রাখাটা প্রকৃত স্বভাবে পরিণত হয়। আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আমাদের পুজো শুরু হত চাঁদা তোলা। পাড়ার বাড়ি বাড়ি বেরোতাম চাঁদা তুলতে।
মনে পড়ে ছোটবেলায় শারদীয়া পুজোর আগমনী বার্তায় আমাদের ঝিমিয়ে পড়া একঘেঁয়েমি স্কুলে দৈনন্দিন পাঠ্যবই বাধ্যতামূলক পড়াশুনার মাঝে হঠাৎ সবার মন আনন্দে নেচে উঠত।
আমরা যারা গত দশকের খড়কুটো আঁকড়ে ধরেই কাটিয়ে দিলাম, মানে ইংরেজিতে যাদের নাইন্টিজ বলে, তাদের কাছে পুজো মানে এগুলোই। আমার এক বন্ধু বলে, মানুষের জীবন খানিকটা এই শরত্কালে উঠোনে বিছিয়ে থাকা শিউলির মত।
যে কোনো স্বপ্নের দিনের অপেক্ষায় দিন গোনাটাই আসল আনন্দ। দিন গুনতে গুনতে শেষে হুড়মুড় করে যখন স্বপ্নটা বাস্তব হতে শুরু করে, তখন যেন আনন্দের পরিধিটা একটু একটু করে কমতে থাকে। এভাবেই একদিন সারা বছর ধরে অপেক্ষায় থাকা আনন্দের দিনগুলো ফুরিয়ে যায়।
নীল আকাশ যত দেখি ততই অতীত স্মরণ করিয়ে দেয়। শরতের এমন উন্মুক্ত আকাশ আমাদের পুরনো বাড়ির পাশে যে বিস্তীর্ণ মাঠ ছিল সেখানেই প্রথম দেখেছিলাম। পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘেই তো অসুর আর দুগ্গা মায়ের যুদ্ধ দেখেছি ছোটবেলায়।
আমি তখন নবম শ্রেণি, আমি তখন শাড়ি নয়তো পাঞ্জাবি। সবে সবে শিখছি হাতে হাতে চিঠি পৌঁছে কীভাবে লজেন্স আদায় হয়। কীভাবে প্যান্ডেলের এক কোণ থেকে আরেক কোণে চোখের ত্যারচা চাউনি দিয়ে পাড়ার দাবার কিস্তিমাত হয়ে যায় বীরপুরুষটির।