
সারা দেশে যে কটি রাজ্য রয়েছে তার মধ্যে কাশ্মীর ও অসমের পরেই মুসলিম জনসংখ্যায় শীর্ষে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। বর্তমান তথ্য অনুসারে, এ রাজ্যের প্রায় ৩০ শতাংশ ভোটদাতা মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত। রাজ্যের অন্তত তিনটি এমন জেলা রয়েছে যেগুলি মুসলিম অধ্যুষিত জেলা (মালদা, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর)। এছাড়াও এমন ৭টি জেলা রয়েছে যেখানে মুসলিম ভোটদাতা রয়েছেন ২৫ শতাংশের বেশি। ফলে সব মিলিয়ে এই বিপুল সংখ্যক ভোটব্যাঙ্ক কার্যত নির্ণায়ক হয়ে দাঁড়ায়।
মুসলিম ভোট এখন তৃণমূলের দখল
অতীত ঘাঁটলে দেখা যাবে সংখ্যালঘু ভোটের একটা বড় অংশ দীর্ঘদিন ধরেই বামেদের সমর্থন করে আসছিল। কিন্তু বাম জমানার শেষের দিকে মুসলিম উন্নতি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। ফলে ২০১১ সালের ভোটে দেখা যায়, মুসিলম ভোটের বিপুল সংখ্যক ভোট গিয়েছে তৃণমূলের দখলে। গত কয়েক বছরে সেই ভোট উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। লোকসভা ভোটের বিচার করলে দেখা যাবে, ২০১৪ সালে এ রাজ্যে ঘাসফুল শিবির ৪০ শতাংশ মুসলিম ভোট পেয়েছিল। কিন্তু ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৭০ শতাংশ। পরে রাজ্যে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত হওয়ায় ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই বেছে নিয়েছিল মুসলিম ভোটের সংখ্যা গরিষ্ঠ অংশ। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।
ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনে মুসলিম ভোট কি ভাগ হতে পারে?
গত প্রায় দেড় দশক ধরে রাজ্য শাসন করছে তৃণমূল। দীর্ঘকাল কোনও দল ক্ষমতায় থাকলে স্বাভাবিক ভাবেই সরকার বিরোধিতার সুযোগ তৈরি হয়। তৃণমূলও তার ব্যতিক্রম নয়। রাজ্যে ঘটা একাধিক ঘটনা তৃণমূলের ভাবমূর্তি ১০০ শতাংশ স্বচ্ছ রাখেনি। কিন্তু তার প্রতিফলন মুসলিম ভোটে ২০২১ সালে দেখা যায়নি। তবে ২০২৬-এর আগে রাজ্যে মুসলিম ভোট নিয়ে চলতে পারে দড়ি টানাটানি।
২২ ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদ থেকে নিজের নতুন দলের নাম ঘোষণা করেছেন তৃণমূলের বহিষ্কৃত বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। হুমায়ুনের জনপ্রিয়তার পিছনে রয়েছে বাবরি মসজিদ। চলতি মাসের শুরুতেই এই মসজিদের শিলান্যাস করেছেন হুমায়ুন। তার সেই অনুষ্ঠান ও পরে দল ঘোষণার সভায় কাতারে কাতারে লোকের উপস্থিতি চোখে পড়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, মুর্শিদাবাদের মুসলিম ভোট কি 'জনতা উন্নয়ন পার্টি' নিজের দখলে রাখতে চলেছে? কারণ ইতিমধ্যেই ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ১৩৫টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ঘোষণা করেছেন হুমায়ুন।
এছাড়াও রয়েছে আসাউদ্দিন ওয়েইসির এআইএমআইএম দল। বিহারের ভোটে এর আগে মিম কিছু সিট পেয়ে তেজস্বীকে বিপাকে ফেলেছিল। বিরোধীরা অভিযোগ করে, আসাউদ্দিন ওয়েইসির দল বরাবরই 'ভোট কাটুয়া' হয়ে আসে ও আদতে বিজেপির সুবিধা করে দেয়। বাংলাতেও সেটাই হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া, শহুরে মুসলিমদের মধ্যে আসাউদ্দিন ওয়েইসির জনপ্রিয়তা রয়েছে।
এমনকি হুমায়ুন কবীর আসাউদ্দিন ওয়েইসির এআইএমআইএম-এর সঙ্গে জোটে যেতে পারেন বলেও জল্পনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে গ্রামের মুসলিম ভোটারদের নিজের দখলে রাখতে পারেন হুমায়ুন। আবার শহুরে ভোটারদের নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করবে এআইএমআইএম। যেটাই হোক আদতে তাতে ক্ষতির আশঙ্কা থাকছে তৃণমূলেরই। অন্যদিকে, হুমায়ুন-আসাউদ্দিন ছাড়াও রাজ্যে রয়েছে ISF। অনেকেই মনে করছেন ভোট কাটাকুটি খেলা হলে ভাঙর ও সংলগ্ন এলাকায় ISF তৃণমূলকে যথেষ্ট বেগ দিতে পারে।
ফলে সব মিলিয়ে ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনে মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ক 'কিংমেকার' হতে পারে। কোন দিকে সেই ভোট ব্যাঙ্ক যায়, নাকি ভাগাভাগি হয়ে বিভিন্ন দলে গিয়ে পড়ে, তা সময় বলবে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, ভোট কাটাকুটি হলে মুসলিম ভোটের বিরাট অংশ যদি তৃণমূলের পাশ থেকে সরে যায়, তবে সেই সুবিধা পাবে বিজেপি। আর এই বিষয় সম্পর্কে অবগত তৃণমূলও। ফলে মুসলিম ভোট নিজেদের দিকে ধরে রাখতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী পদক্ষেপ নেন, সেটাই এখন দেখার।