বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার তিন মাস পর রবিবার ঢাকায় বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে তাঁর দল আওয়ামি লিগ। ছাত্র আন্দোলনের পর থেকেই বাংলাদেশে একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে আওয়ামি লিগ। তাদের নেতা কর্মীদের ওপরে হামলা হয়েছে। বহু নেতাকে জেলে ভরা হয়েছে। এখন আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে হাসিনার দল। গত মাসে মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওযামি লিগের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লিগকে নিষিদ্ধ করেছিল। এখন ফ্যাসিস্ট তকম দিয়ে আওয়ামি লিগও নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে সরকার। শনিবার জারি করা আওয়ামি লিগের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশের মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র, মৌলবাদী শক্তির উত্থান এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করার বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ। আমরা আপনাদের সকলের কাছে আওয়ামিকে সমর্থন করার আহ্বান জানাচ্ছি। একত্রিত হয়ে বর্তমান সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানাচ্ছি লিগ নেতা-কর্মীদের।
আওয়ামি লিগকে সরকারের হুঁশিয়ারি
আগেই ইউনুস সরকারের তরফে আওয়ামি লিগকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। সেখানে সাফ জানানো হয়েছে, আওয়ামি লিগ একটি ফ্যাসিবাদি দল। তাদের কোনও কর্মকাণ্ডকে এই সরকার সমর্থন করে না। তারা রাস্তায় নামলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সমাবেশ ঠেকাতে কড়া পুলিশ ও সেনা
আওয়ামি লিগের সমাবেশ ও বিক্ষোভ ঠেকাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একাধিক এলাকায় জড়ো হয়েছে। বিএনপি ও জামাত আগেই জানিয়েছে তারা আওয়ামি লিগকে আন্দোলন করতে দেবে না। পুলিশও বিক্ষোভ সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। বিকেল ৩টার পর ঢাকায় ব্যাপক বিক্ষোভের সম্ভাবনা রয়েছে। সারাদেশে বিজিবির ১৯১টি টিম মোতায়েন করা হয়েছে।
দমন শুরু
তবে এই ধরনের যে কোনও পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আওয়ামি লিগকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। শনিবার এক বিবৃতিতে মহম্মদ ইউনূসের প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম বলেন, 'আওয়ামি লিগ তার বর্তমান রূপে একটি ফ্যাসিবাদী দল। এই ফ্যাসিবাদী দলকে বাংলাদেশে বিক্ষোভ করতে দেওয়া হবে না। যে কেউ গণহত্যাকারী ও স্বৈরশাসকের নিন্দা করবে। শেখ হাসিনার নির্দেশে কেউ সমাবেশ, মিটিং-মিছিল করার চেষ্টা করলে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পূর্ণ শক্তির মুখোমুখি হতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত করার কোনও অপচেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না।'
রবিবার সকাল থেকেই ঢাকায় আওয়ামি লিগের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের ওপর ব্যাপক দমন অভিযান চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কয়েকশো কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। কারণ ঢাকার গুলিস্তান, জিরো পয়েন্ট, নূর হোসেন স্কয়্যার এলাকায় আওয়ামি লিগের কর্মী সমর্থক ও আন্ডারগ্রাউন্ড নেতারা রাস্তায় নেমেছেন। আওয়ামি লিগের সমাবেশ ও বিক্ষোভ ঠেকাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও রাস্তায় নেমেছে। বিএনপিও জানিয়েছে যে তারা আওয়ামি.লিগকে সমাবেশ বা বিক্ষোভ করতে দেবে না। ঢাকা পুলিশ তাদের বিক্ষোভ সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। সারাদেশে বিজিবি-র ১৯১ প্লাটুন মোতায়েন করা হয়েছে। আওয়ামি লিগের কর্মসূচির প্রতিবাদে সকাল থেকে নূর হোসেন চত্বর ও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামি লিগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি চলছে। সেখানে আওয়ামি লিগ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেওয়া হয়। আওয়ামি লিগের কার্যালয়ের সামনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) টহল দিতে দেখা গিয়েছে। প্রচুর পুলিশও সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে।
অন্যদিকে ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ মঞ্চের ব্যানারে আজ দুপুর ১২টায় ঢাকার জিরো পয়েন্টে পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামি লিগ নেতাদের বিচারের দাবি জানাবে। গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে জনসমাবেশের ডাক দিয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আন্দোলনের সমন্বয়কারী হাসনাত আবদুল্লা বলেছেন, দুপুর ১২টায় সেখানে একটি ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চ তৈরি করা হবে।
আওয়ামি লিগের ছাত্রসংগঠনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ
আওয়ামি লিগের ছাত্র সংগঠন 'ছাত্র লীগ'কে অন্তর্বর্তী সরকার নিষিদ্ধ করেছিল। নোবেল জয়ী মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার একটি গেজেট জারি করে এবং ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের বিধান অনুযায়ী সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। গেজেটে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ছাত্র লিগ জননিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ কর্মকাণ্ডে জড়িত। এসব কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে খুন, নির্যাতন, কলেজ ক্যাম্পাসে হয়রানি, ছাত্র ছাত্রাবাসে দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ এবং যৌন হয়রানির মতো গুরুতর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।