গত সপ্তাহেই বাংলাদেশ থেকে ইলিশ এসেছে রাজ্যে। ইলিশের প্রথম চালান ভারতের বাজারে উঠেছে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর)। মানিকতলা ও লেক মার্কেটের মতো বাজারে প্রায় এক কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ২০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১.৫ কেজির বেশি ওজনের বড় মাছ প্রতি কেজি ২,৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এরমধ্যেই সামনে আসছে খারাপ খবর। বাংলাদেশের ইউনূস সরকার ১,২০০ টন ইলিশ রফতানির সিদ্ধান্ত নিলেও তা ভারতের বাজারে নাও আসতে পারে।
ভারতে এখনও পর্যন্ত ৬৩ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানি হয়েছে। তারপরেই ধীরগতি দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের রফতানিকারীদের দাবি, ভারতে রফতানি মূল্যের তুলনায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে দর বেশি থাকায় জেলেরা ইলিশ পাঠাতে চাইছে না। তা ছাড়া, পশ্চিমবঙ্গের বাজারের চাহিদাও আগের মতো নেই। কেউ আবার লোকসানের ভয়ে রফতানির সনদ নিলেও মাছ পাঠাচ্ছেন না। লোকসানের কারণে বরিশাল থেকে ভারতে ইলিশ রফতানি ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিমণ ইলিশে প্রায় ৫০০ টাকা ক্ষতি হওয়ায় রফতানিকারকরা এখন আর মাছ পাঠাচ্ছেন না। ফলে যা পরিস্থিতি ১২০০ টন ইলিশ রফতানির কথা থাকলেও ৫০০ টন ইলিশ আসা নিয়েই শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, দুর্গাপুজো উপলক্ষে ভারতে ১২০০ টন ইলিশ রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রক রফতানি দর নির্ধারণ করেছে প্রতি কেজি ১২.৫ মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় এক হাজার ৫২৫ টাকা। ৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে রফতানির অনুমোদন দেওয়া হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবরের মধ্যে রফতানি করতে হবে। ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি মরসুমের শুরু থেকে সাগর-নদীতে পর্যাপ্ত ইলিশ না পাওয়ায় বাংলাদেশে ইলিশের দাম সাধারণের নাগালের বাইরে। রফতানিযোগ্য (৬০০ গ্রামের বেশি) ইলিশের দাম পাইকারি ২০০০ টাকা। এক কেজি বা এর বেশি ওজন হলে তার দাম ২ হাজার ২০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা। রফতানির জন্য মাছ প্যাকেটিং ও বেনাপোল পর্যন্ত পরিবহন খরচ যুক্ত করলে কেজিতে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা বেড়ে যায়। ফলে বাণিজ্য মন্ত্রকের নির্ধারিত ১ হাজার ৫২৫ টাকা কেজি দরে রফতানি করলে বড় লোকসান হবে। এ কারণে রফতানির অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো ইলিশ রফতানিতে আগ্রহী নয়।
একাংশের আবার অভিযোগ, ব্যবসায়ীরা আগেই চোরাপথে পর্যাপ্ত ইলিশ ভারতে পাঠিয়েছেন। যে কারণে বাংলাদেশের চেয়ে এখন ভারতের বাজারে ইলিশ বেশি। যার প্রভাব পড়েছে রফতানির ক্ষেত্রে। বরিশাল পোর্ট রোড মোকামের চারটি প্রতিষ্ঠান রফতানির অনুমতি পেয়েছে। এর মধ্যে মাহিমা এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক বাবর আলি সংবাদমাধ্যমকে জানান, বরিশাল থেকে যেসব আড়তদার ইলিশ কিনে রফতানিকারকদের কাছে পাঠান, দু’দিন ধরে তাঁরা পড়েছেন বিপাকে। রফতানি দরের চেয়ে বাজারে দাম অনেক বেশি। অন্যদিকে ভারতের বাজারে নিজস্ব ইলিশ থাকায় সেখানকার বাজারে দাম কম। বলা হচ্ছে, ভারতের আমদানিকারকরা পদ্মার ইলিশ নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। যে কারণে অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই রফতানি বন্ধ রেখেছে।