
চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অবস্থা অত্যন্ত জটিল। তিনি সংকটময় মুহূর্ত পার করছেন বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির মেম্বার ডা.এ জেড এম জাহিদ হোসেন। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সবশেষ অবস্থা প্রসঙ্গে ডা. জাহিদ হোসেনের বক্তব্য, ‘স্বাভাবিকভাবেই উনার (খালেদা জিয়া) অবস্থার উন্নতি হয়েছে—এ কথা বলা যাবে না।...উনার (খালেদা জিয়া) অবস্থা অত্যন্ত জটিল এবং উনি একটা সংকটময় মুহূর্ত পার করছেন।’ খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের এই অবস্থার মধ্যেই বগুড়ার গাবতলী ও শাজাহানপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া-৭ আসনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়েছে। সোমবার দলীয় প্রধানের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদারের (লালু) নেতৃত্বে বগুড়ার জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা তৌফিকুর রহমানের কাছে এই মনোনয়নপত্র জমা দেওয় হয়। তবে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে মনোনয়নপত্রে তাঁর স্বাক্ষরের বদলে আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমার সময় উপস্থিত ছিলেন শাজাহানপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এনামুল হক, গাবতলী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক ও গাবতলী পৌর বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম প্রমুখ। মনোনয়নপত্র দাখিলের পর উপস্থিত সাংবাদিকদের বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জানান তালুকদার বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অসুস্থ। তিনি ইশারা-ইঙ্গিতে যোগাযোগ করছেন। মনোনয়নপত্রে খালেদা জিয়া স্বাক্ষরের বদলে তাঁর আঙুলের ছাপ দিয়েছেন। খালেদা জিয়ার নির্বাচনী সমন্বয়কারী মুন্সি রফিকুল আলম ওরফে মজনু বলেন, ‘বিএনপির দলীয় প্রার্থী চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তাঁর পক্ষেই আমরা কাজ করছি।’
আসন্ন ভোটে খালেদা জিয়ার হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হলেও এই আসনে বিকল্প প্রার্থী ঠিক করে রাখা হয়েছে বলে জানান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনি বলেন, ‘নেত্রী অসুস্থ থাকায় বিকল্প প্রার্থী রাখা হয়েছে। যদি শেষ মুহূর্তে তিনি ভোটে লড়তে না পারেন তখন বিকল্প চিন্তা করা হবে। তবে খালেদা জিয়া মাঠে না থাকলেও তাঁর পক্ষে প্রচার চলবে।’ এর আগে ২১ ডিসেম্বর বিকেলে ফেনী-১ আসনে খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু তালেবের নেতৃত্বে বিএনপির নেতারা।
বগুড়ার গাবতলীতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বাড়ি। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়া প্রথমবারের মতো বগুড়া-৭ আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে জয়ী হন, তবে জয়ের পর প্রতিবারই খালেদা জিয়া আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচন হয়। তিনটি উপনির্বাচনে বিজয়ী হন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার। ২০০৮ সালের উপনির্বাচনে দলের স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য মওদুদ আহমদ জয়ী হন। তবে চেয়ারপার্সনের শারীরিক ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে তিনটি আসনেই বিকল্প প্রার্থী প্রস্তুত রেখেছে বিএনপি। খালেদা জিয়া এবার বগুড়া-৭, ফেনী-১ এবং দিনাজপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচনে লড়ছেন। তার জন্য নির্ধারিত তিনটি আসনেই ডামি বা বিকল্প প্রার্থী রেখেছে দল। দলীয় সূত্র বলছে, খালেদা জিয়ার মনোনয়ন কোনো কারণে বাতিল হলে বা তিনি অসুস্থতার কারণে লড়তে না পারলে এসব আসনে বিকল্প প্রার্থীরাই হবেন ধানের শীষের কান্ডারি।