আগামী ফেব্রুয়ারিতে দেশের ইতিহাসের অন্যতম স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচন হবে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বতী সরারের প্রধান মহম্মদ ইউনূস। এই নির্বাচন দেখতে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা উপস্থিত থাকবেন বলেও আশা করছেন ইউনূস। এদিকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে কোন দল কত শতাংশ ভোট পেতে পারে, সে বিষয়ে প্রকাশিত হয়েছে একটি জনমত সমীক্ষার রিপোর্ট। ‘পিপলস ইলেকশন পালস সার্ভে রাউন্ড টু’-র ফল প্রকাশিত হয়েছে বুধবার। তাতে দেখা যাচ্ছে, ৪১ শতাংশ ভোটারই আস্থা রাখছেন খালেদা জিয়ার দল বিএনপির উপর।
কে কত শতাংশ সমর্থন পাচ্ছে?
বুধবার রাজধানী ঢাকার জাতীয় আর্কাইভস মিলনায়তনে ‘জনগণের নির্বাচন–ভাবনা’ শীর্ষক জনমত সমীক্ষার দ্বিতীয় দফার দ্বিতীয় পর্বের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। সমীক্ষাটি পরিচালনা করেছে ‘ইনোভিশন কনসাল্টিং’ নামে একটি ভোট পর্যবেক্ষণ সংস্থা। সহযোগিতা করেছে নাগরিকমঞ্চ ‘ভয়েস ফর রিফর্ম’ ও ‘বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক’ (বিআরএআইএন)। সমীক্ষার ফলাফল জানাচ্ছে, বাংলাদেশের আটটি প্রশাসনিক বিভাগের মধ্যে ছ’টি বিভাগের ভোটদাতারা বিএনপির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। কট্টরপন্থী জামায়াত-ই-ইসলামি এবং গত বছরের অগাস্টে গণবিক্ষোভের জেরে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার আওয়ামী লিগ এগিয়ে রয়েছে একটি করে বিভাগে। জানা যাচ্ছে, ৬৪টি জেলার ১০ হাজার ৪১৩ জন ভোটারকে নিয়ে সমীক্ষা চালানো হয়। তাতে দেখা যাচ্ছে, ভোট দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমন অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটির পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন ৪১.৩০ শতাংশ ভোটার। এর পরেই রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, যাদের প্রতি ৩০.৩০ শতাংশ ভোটারের সমর্থন দেখা গেছে। গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লিগ তৃতীয় স্থানে আছে, যাদের ভোট ১৮.৮০ শতাংশ। নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ৪.১০ শতাংশ ভোটারের সমর্থন নিয়ে তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে। অর্থাৎ, ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা সত্ত্বেও শেখ হাসিনার আওয়ামী লিগের প্রতি সমর্থন এখনও ভালোই রয়েছে বাংলাদেশে। বরং, গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের একাংশের তৈরি নতুন দল এনসিপির প্রতি সমর্থন কার্যত অকিঞ্চিৎকর।
মার্চের সমীক্ষা
সমীক্ষক সংস্থা সূত্রে খবর, মার্চে খালেদা জিয়ার দল বিএনপির প্রতি এই হার ছিল একটু বেশি, ৪১.৭০ শতাংশ। জামাত-ই-ইসলামির ক্ষেত্রে এই হার মার্চে ছিল ৩১.৬০ শতাংশ। সেখান থেকে এবার তা আরও কমেছে। আর ছাত্রদল এনসিপির ক্ষেত্রে জনসমর্থন ৫.১০ শতাংশ থেকে কমে ৪.১০ শতাংশ হয়েছে। জনতার কাছে সমীক্ষক সংস্থার প্রশ্ন ছিল, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামি লিগ ভোটে অংশগ্রহণ করতে না পারলে তাদের প্রতি সমর্থন কোন দলে যাবে। ৪৫.৬ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, সেই ভোট বিএনপি পাবে। তবে ৪৫.৭৯ শতাংশ মানুষের মত, আওয়ামি লিগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া উচিত। আবার ৪৫.৫৮ শতাংশের বক্তব্য, আগে বিচার হওয়া দরকার। গত মার্চেও একটি সমীক্ষা চালিয়েছিলো ইনোভেশন কনসাল্টিং। ওই সময়ের তুলনায় সেপ্টেম্বরের সমীক্ষায় দেখা গেছে, পছন্দ প্রাকাশ করা ভোটারদের মধ্যে বিএনপির শেয়ার ০.৪০ পয়েন্ট এবং জামায়াতের ১.৩ পয়েন্ট কমেছে। অপরদিকে আওয়ামী লিগের ৪.৮০ পয়েন্ট বেড়েছে।
আওয়ামী লিগ নির্বাচনে না এলে কী হবে?
যদি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লিগ অংশগ্রহণ না করে, তাহলে তাদের ভোটারদের একটি বড় অংশ অন্য দলগুলোকে ভোট দিতে আগ্রহী। সমীক্ষা বলছে, আওয়ামী লিগের ২০ শতাংশ ভোটার বিএনপিকে, ১৪.৮ শতাংশ জামায়াতকে এবং ২.১ শতাংশ ভোটার এনসিপিকে ভোট দিতে আগ্রহী। সমীক্ষা বলছে, আওয়ামী লিগের ২০ শতাংশ ভোটার বিএনপিকে, ১৪.৮ শতাংশ জামায়াতকে এবং ২.১ শতাংশ ভোটার এনসিপিকে ভোট দিতে আগ্রহী।
সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, ৬৫.৫ শতাংশ ভোটার দলীয় প্রতীকের পরিবর্তে প্রার্থী বিবেচনায় ভোট দিতে আগ্রহী। মাত্র ১৪.৭ শতাংশ ভোটার প্রতীক দেখে ভোট দেবেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে বেশিরভাগ উত্তরদাতা ভারত (৭২.২%) ও পাকিস্তানের (৬৯%) সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে পাকিস্তানের প্রতি আগ্রহ কম, ভারতের প্রতি সমর্থন বেশি দেখা গেছে।