শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়ছে। হাসিনাকে এখন দেশে ফেরত চাইছে বাংলাদেশ। এই নিয়ে কেন্দ্রের উপর ক্রমশ চাপ দিচ্ছে ইউনূস পরিচালিত সরকার। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেফতারের জন্য ইন্টারপোলের সাহায্য চেয়েছে তারা। এই পরিস্থিতিতে ভারত কী করবে?
ইউনূস সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ডঃ তৌহিদ হুসেন ২৩ ডিসেম্বর হাসিনাকে প্রত্যর্পণের দাবিটি তুলে ধরেন। কূটনৈতিক নোট পাঠানোর সময় তিনি বলেন, সরকার আইনি প্রক্রিয়ার জন্য হাসিনার প্রত্যর্পণ চায়। বাংলাদেশ সরকারের অভিযোগ, হাসিনার আমলে অনেক হিংসা হয়েছে। হাসিনা ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে ৬০টিরও বেশি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে গণহত্য়াও সামিল। তাই হাসিনাকে বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে আনা প্রয়োজন।
জানা যায়, এই একাধিক অভিযোগের তদন্তের জন্য হাসিনা-সহ আওয়ামি লিগের অনেক নেতাকে গ্রেফতার করতে চায় বাংলাদেশ সরকার। সেজন্য ভারতকে অনুরোধও জানানো হচ্ছে। সম্প্রতি পাঠানো একটি কূটনৈতিক বার্তাও এই বিষয়ে ছিল। যদিও এই নোট মৌখিক ছিল। সেখানে কোনও আধিকারিকের স্বাক্ষর ছিল না।
বাংলাদেশ কীসের ভিত্তিতে হাসিনাকে ফেরত চাইছে?
আসলে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত চুক্তি রয়েছে। ২০১৩ সালে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই অনুযায়ী উভয় দেশকে অপরাধীদের একে অপরের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। এতে বিধান রয়েছে যে, যদি কোনও ব্যক্তি এমন কোনও অপরাধ করে থাকে যার কমপক্ষে এক বছরের সাজার বিধান রয়েছে, তাহলে তাঁকে প্রত্যর্পণ করা হবে। চুক্তিতে উল্লেখ, কোনও ব্যক্তি যদি রাজনৈতিক প্রকৃতির কোনও অপরাধ করে থাকে তাহলে তাঁর প্রত্যর্পণও প্রত্যাখ্যান করা যাবে। তবে হত্যা, গণহত্যা ও অপহরণের মতো অপরাধে জড়িত ব্যক্তির প্রত্যর্পণ অস্বীকার করা যাবে না। অপরাধটি রাজনৈতিক হলে কোনও দেশ প্রত্যর্পণ অস্বীকার করতে পারে।
চুক্তিতে আরও একটি ধারা রয়েছে, উভয় পক্ষের যে কোনও একটি দেশ নোটিশ দিয়ে যে কোনও সময় চুক্তিটি শেষ করতে পারে। তবে এমনটা করলে কূটনৈতিক সম্পর্ক দুর্বল হয়ে যেতে পারে। সেকারণে বর্তমানে ভারত এই বিষয়ে সরাসরি বা কড়া কোনও প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে না।
বিকল্প হাসিনার কাছেও রয়েছে
হাসিনা নিজেই আদালতে প্রত্যর্পণকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন যদি তিনি মনে করেন, তদন্ত স্বচ্ছভাবে হবে না। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ হাসিনার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করতে পারে। সেক্ষেত্রে গোটা বিষয়টি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে পারে। তবে তা হবে কি না সেটার উত্তর দেবে সময়। কারণ, ঢাকায় রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হতে পারে। এমন হয়তো দিন আসবে যেদিন নিজেই হাসিনা সেদেশে ফিরে ক্ষমতায় বসতে পারেন।