বাংলাদেশে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। শনিবার বিকেলে তিনি এ কথা জানান। সিইসি বলেন, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো, আরও উন্নতির দিকে যাচ্ছে। আমরা চাই যাতে শান্তিপূর্ণ ও নির্ভয়ে মানুষ পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে পারেন। মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাওয়া ভুলে গেছে। তাদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াই নির্বাচন কমিশনের চ্যালেঞ্জ। এজন্য সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে।
সিইসি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে কাউকেই বিশৃঙ্খলা করার কোনও সুযোগ দেওয়া হবেনা। যে কেউ অরাজকতা করার চেষ্টা করলে তা কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা হবে। নির্বাচনে কেউ একজন গোলমাল করলো বা বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলেই সঙ্গে সঙ্গেই ওই কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হবে না। প্রপার তদন্ত করে দেখা হবে তারপর প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে। কোনও ধরনের অরাজকতা কাউকেই করতে দেওয়া হবে না।’ সিইসি আরও বলেন, ‘নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা সব প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। আশা করছি, জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দেবেন।’
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হতে পারে ৫, ৮ কিংবা ১২ ফেব্রুয়ারি। এই তিনটি তারিখকে চূড়ান্ত করে ভোটের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই তারিখগুলোর যেকোনও একটিকে বেছে নেওয়ার বিষয়ে কমিশনের বৈঠকে আলোচনা করা হবে। কমিশন চাইলে ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারিকেও বেছে নিতে পারে।
এরআগে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস ঘোষণা করেছিলেন যে, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লিগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। দেশ ছাড়তে হয় শেখ হাসিনা ও তাঁর বোনকে ৷ ৫ অগাস্ট, ২০২৪ তারিখে হাসিনা সরকারের পতন ঘটে এবং তিনি ভারতে চলে আসেন। হাসিনার দেশ ছাড়ার পরবর্তী বেশ কয়েক মাস ধরে আওয়ামী লিগ সমর্থক ও সংখ্যালঘু সম্প্রোদায়ের উপর একাধিক হামলা ও বিক্ষোভের ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ ৷ এর পর, মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দেয়। গত কয়েক মাস ধরে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলি নতুন করে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল।
গত মঙ্গলবার গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে মহম্মদ ইউনূস বলেন, 'এবার আমাদের সর্বশেষ দায়িত্ব পালনের পালা— নির্বাচনের আয়োজন করা। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে একটি চিঠি পাঠাবো যাতে আসন্ন রমজানের অগে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন কমিশনকে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুরোধ করা হয়।' আগামী বছরের ১৭ বা ১৮ ফেব্রুয়ারি রমজান মাস শুরু হতে চলেছে। এর অগে, বাংলাদেশে এই নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।