
বাংলাদেশে কিছুই আর ঠিকঠাক নেই, ইসলামী মৌলবাদ সেখানে ক্রমশ প্রাধান্য পাচ্ছে। সর্বশেষ ঘটনাটি সেখানকার স্কুলগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত। নোবেল বিজয়ী মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইসলামী সংগঠনগুলির তীব্র চাপের কাছে নতি স্বীকার করেছে। সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সঙ্গীত এবং শারীরশিক্ষার প্রশিক্ষন দেওয়া শিক্ষকের পদ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উল্লেখ্য, ধর্মীয় মৌলবাদীরা বলেছিল, স্কুলে সঙ্গীত এবং নৃত্য শেখানো 'ইসলামবিরোধী'।
সোমবার, বাংলাদেশের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রক একটি নতুন নিয়োগ নীতি প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে, সহকারী শিক্ষক পদগুলিতে আর সঙ্গীত এবং শারীরিকশিক্ষা অন্তর্ভুক্ত থাকবে না। মন্ত্রকের কর্মকর্তা মাসুদ আখতার খান বলেন, 'অগাস্টে জারি করা নিয়মে চারটি বিভাগ ছিল, কিন্তু সংশোধিত নিয়মে মাত্র দুটি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সঙ্গীত এবং শারীরিকশিক্ষার শিক্ষক পদ এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নয়।' ধর্মীয় সংগঠনের চাপে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, 'আপনারা নিজেরাই এটির তদন্ত করতে পারেন।'
কয়েক মাস ধরে ইসলামিক বিক্ষোভ চলছিল
এই সিদ্ধান্তের মূলে রয়েছে গত কয়েক মাস ধরে চলা বিক্ষোভ। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস এবং হেফাজতে ইসলামের মতো ইসলামী সংগঠনগুলি প্রাথমিক শিক্ষায় সঙ্গীত ও নৃত্য অন্তর্ভুক্ত করার সরকারের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছিল। সেপ্টেম্বরে ঢাকায় এক বিশাল সমাবেশে ইসলামী আন্দোলনে বাংলাদেশের প্রধান মুখ সৈয়দ রেজাউল করিম বলেছিলেন, 'আপনারা সঙ্গীত শিক্ষক নিয়োগ করতে চান? তারা শিশুদের কী শেখাবেন? আপনারা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নষ্ট করতে চান, তাদের অপসংস্কৃত শেখাতে চান এবং চরিত্রহীন করতে চান? আমরা কখনই এটি সহ্য করব না।' করিম আরও সতর্ক করে দিয়েছিলেন, যদি সরকার তাদের দাবি পূরণ না করে, তাহলে 'ইসলামপ্রেমী মানুষ' রাস্তায় নেমে আসবে। ইসলামী নেতারা অভিযোগ করেছেন, এই পদক্ষেপ 'নাস্তিক মতাদর্শ' প্রচার এবং 'আগামী প্রজন্মকে বিশ্বাস থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার' একটি ষড়যন্ত্র।
ইউনূস সরকারের উপর ক্রমবর্ধমান মৌলবাদী চাপ
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউনূস সরকারের এই পদক্ষেপ ধর্মীয় মৌলবাদীদের কাছে আত্মসমর্পণ। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনের সময় সীমিত পরিসরের সংগঠনগুলি এখন প্রকাশ্যে সক্রিয় এবং সরকারের উপর নীতিগত চাপ প্রয়োগ করছে। এই একই সংগঠনগুলি সম্প্রতি ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে, যাকে তারা 'চরমপন্থী সংগঠন' বলে অভিহিত করেছে। তদুপরি, তারা নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হলে হিংসার হুমকি দিয়েছে।
ধর্ম বনাম সংস্কৃতি: বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল চেহারা
একসময় ধর্মনিরপেক্ষ, সাংস্কৃতিক এবং শৈল্পিক ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত বাংলাদেশ দ্রুত ধর্মীয় মৌলবাদের দিকে ঝুঁকছে বলে মনে হচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে সঙ্গীত এবং খেলাধুলার মতো সাংস্কৃতিক কার্যকলাপকে বাদ দেওয়া, 'ইসলামবিরোধী' হিসেবে চিহ্নিত করা, দেশের সামাজিক কাঠামোর মধ্যে গভীর আদর্শগত বিভেদের ইঙ্গিত দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে, বাংলাদেশ সেই পরিচয় হারাতে পারে যা একসময় এটিকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে প্রগতিশীল মুসলিম দেশগুলির মধ্যে একটি করে তুলেছিল।