ইউনূস সরকার এখন ঘরে-বাইরে চাপে। একদিকে যখন প্রধান উপদেষ্টা পদ থেকে মহম্মদ ইউনূসের ইস্তফার জল্পনা তুঙ্গে, তখনই শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ করায় প্রবল আন্তর্জাতিক নিন্দার মুখে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। যার নির্যাস, একদিকে দেশের ভিতরে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সেনাবাহিনীর চাপ এবং জনমনে অসন্তোষ—অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মহলের কড়া সমালোচনা। সব মিলিয়ে মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এই সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।
গত ১২ মে রাতারাতি আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত ভাল ভাবে নিচ্ছে না আন্তর্জাতিক মহল। প্রায় ৭৫ বছরের পুরনো দল, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লিগকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ‘সংশোধিত ধারা’ ব্যবহার করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরপরই নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করে। ফলে এখন আওয়ামী লিগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। এই পদক্ষেপ ঘিরেই দেশ-বিদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মহলের তীব্র সমালোচনা
নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW) এই সিদ্ধান্তকে 'স্বৈরতান্ত্রিক' এবং 'অবিচারমূলক' বলে আখ্যা দিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, ইউনূস সরকার তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে একটি বিরোধী দলের সমর্থকদের মৌলিক অধিকার হরণ করছে। সংস্থাটির মতে, 'সরকার যেখানে ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেখানে তারা উল্টো আইন পরিবর্তন করে বিরোধীদের দমন করছে।'
সেনাবাহিনীর মধ্যেও অসন্তোষ
ঘরোয়া চাপও কম নয়। ঢাকাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্ব সম্প্রতি এক বৈঠকে স্পষ্ট জানিয়েছে, তারা চায় ডিসেম্বরের মধ্যেই একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসুক। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ্জামান কয়েকটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলেও খবর মিলেছে। এর ফলে বোঝা যাচ্ছে, দেশের শক্তিশালী মহলগুলিও ইউনূস সরকারের কিছু পদক্ষেপে দ্বিমত পোষণ করছে।
হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার পরিণতি কী?
সরকার দাবি করছে, শেখ হাসিনা এবং তাঁর দল গত বছরের ছাত্র আন্দোলন দমনে 'অপরাধ মানবতার বিরুদ্ধে' কাজ করেছে। সেই অভিযোগেই দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু অনেকের মতে, বিচার শেষ হওয়ার আগেই দল নিষিদ্ধ করাটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ। ট্রাইবুনাল এখনও রায় দেয়নি। অথচ ততদিন পর্যন্ত দলের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে।
ভোট হবে কীভাবে?
এখন বড় প্রশ্ন, নির্বাচন হবে কাদের নিয়ে? দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলই যদি নির্বাচনের বাইরে থাকে, তাহলে সেই নির্বাচন কতটা “স্বচ্ছ” বা “গণতান্ত্রিক” হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সাধারণ মানুষও এখন দ্বিধায়। যারা আওয়ামী লিগের সমর্থক, তাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। আবার যারা সরকারের পক্ষের, তারাও ভাবছে, এই নিষেধাজ্ঞা দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।