আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার গণভবনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান আওয়ামী লিগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গণভবন গেটে ব্রিফিংয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ তথা দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের অনেক প্রতিক্ষিত পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প নিয়ে সুসংবাদ হলো, আগামী ২৫ জুন শনিবার সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন করবেন।’ উদ্বোধনের পরই সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
নাম থাকছে পদ্মা সেতুই
উত্তাল পদ্মা নদীর বুকে গড়ে তোলা বহুল প্রতীক্ষিত সেতুর নাম থাকছে পদ্মা সেতুই। গণভবন থেকে বের হয়ে আওয়ামী লিগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে পদ্মা সেতুর সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন ওবায়দুল কাদের। তারা দুটো সামারি নিয়ে গিয়েছিলেন উল্লেখ করে কাদের বলেন, ‘একটি সামারিতে তারিখ দিয়ে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সই করেছেন। আরেকটি সামারিতে তিনি স্বাক্ষর করেননি। সেটা হচ্ছে নামকরণ নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পদ্মা সেতুর নাম পদ্মা নদীর নামেই হবে, এখানে কারোর নাম থাকার দরকার নেই।’কাদের জানান, আগামী ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতু উদ্বোধন করবেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পদ্মা নদীর নামেই নামকরণ করা হবে পদ্মা সেতুর।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনী আয়োজন বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী জানান, উদ্বোধন উপলক্ষে সাজসজ্জা করা হবে। এছাড়া মাওয়া প্রান্তে সমাবেশ, আর জাজিরা প্রান্তে একটা জনসভা হবে। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতাদের এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। যারা বেশি বিরুদ্ধে বলছে, তাদের আগে দেবো আমন্ত্রণ।’এর আগে ১১ মে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতির সামারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়েছে। আগামী মাসের (জুন) শেষ দিকে সেতুটি উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চেয়েছি। তিনি সময় দিলে জুনেই পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর টোল নির্ধারিত হয়েছে, মোটরসাইকেল এবং বড় বাস ছাড়াও মাঝারি ধরনের বাসের টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার টাকা, কার ও জিপের ৭৫০ টাকা, চার এক্সেল টেইলারের ৬ হাজার টাকা, মাইক্রো বাস ১৩০০ টাকা এবং মিনিবাসের (৩১ সিট বা তার কম) টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪০০ টাকা।
পদ্মা নদীর বুকে নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার কোটি টাকায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর কাজ ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে উদ্বোধন করেছিলেন শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে বসে প্রথম স্প্যান। মাঝে ২২টি খুঁটির নাচে নরম মাটি পাওয়া গেলে নকশা সংশোধনের প্রয়োজন হয়। তাতে বাড়তি সময় লেগে যায় প্রায় এক বছর। এরপর করোনাভাইরাস মহামারি আর বন্যার কারণেও কাজের গতি কমে যায়। সব বাধা পেরিয়ে অক্টোবরে বসানো হয় ৩২তম স্প্যান। এরপর বাকি স্প্যানগুলো বসানো হয়ে যায় অল্প সময়ের মধ্যেই। ঠিক পাঁচ বছরের মাথায় পূর্ণ আকৃতি পায় স্বপ্নের সেতু, যুক্ত হয় পদ্মার দুই পাড়। আর এই সেতুর কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষেদের জীবনে এবার পরিবর্তন আসতে চলেছে। খুলনা ও বরিশাল বিভাগসহ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলাকে এতদিন বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল পদ্মার বিপুল জলরাশি। উন্নয়নের সামনে যে পদ্মা এতকাল দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেখানে বাস্তবে রূপ নিয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।
দুই যুগের বেশি সময় ধরে পদ্মার ওপর একটি সেতুর অপেক্ষায় ছিলেন বাংলাদেশের অবহেলিত দক্ষিণা-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। তাই পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণা ঢাকা বিভাগের পাঁচ জেলাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য অন্যরকম আনন্দের। তারা বলছেন, সেতুটি চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার যে উন্নতি ঘটবে, তা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিপুল প্রসার ঘটাবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে গোটা বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের নতুনমাত্রা যোগ করবে সেতুটি। সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর দুইপাড়ে গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র। শরীয়তপুর প্রান্তের জাজিরায় গড়ে উঠছে রেস্টুরেন্ট, রিসোর্ট, হোটেল, মোটেলসহ বিলাসবহুল বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।