বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নিপীড়নের ঘটনা প্রথম থেকেই কার্যত অস্বীকার করে আসছিল ইউনূস সরকার। মঙ্গলবার উল্টো সুর শোনা গেল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের। হিন্দুদের উপর যে আক্রমণ হয়েছে, তা একপ্রকার মেনে নিল ইউনূসের সরকার। ওপার বাংলায় হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ এবং হিংসার ঘটনায় মোট ৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে মঙ্গলবার এক তথ্য প্রকাশ করে জানাল ইউনূস সরকার। ওই তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ৫ অগাস্ট থেকে ২২ অক্টোবরের মধ্যে সে দেশ হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের ঘটনায় ওই ৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিভিন্ন থানায় ৮৮টি মামলা রুজু করা হয়। সেই মামলার ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সোমবার ভারত ও বাংলাদেশের বিদেশ সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে ভারতীয় বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রী বাংলাদশে হিন্দুদের উপর নির্যাতন নিয়ে উদ্বেগের কথা জানান। সে দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে যাতে নিরাপত্তা দেওয়া হয়, সে কথাও জানান বলে খবর। তার পরের দিনই বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর আক্রমণের ঘটনায় গ্রেফতারির খবর প্রকাশ করল ইউনূস সরকার।
অন্য দিকে, বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর আক্রমণ অব্যাহত। শনিবার ঢাকায় ইসকনের মন্দিরে আগুন লাগানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইসকন বাংলাদেশের তরফে জানানো হয়েছে, একজন ইসকন ভক্তের 'পারিবারিক মন্দিরে' হামলা চালানো হয়েছে। কলকাতা ইসকন জানিয়েছে, 'ইসকন নামহট্ট সেন্টার'-এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঢাকার তুরাং থানার অন্তর্গত ধৌর গ্রামের ঘটনা। তুরাং থানার আধিকারিকরা জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের ধরতে তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী জানিয়েছেন, আগুন সঙ্গে সঙ্গে নেভানো হয়। তবে মূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসকন কলকাতার প্রধান রাধারমণ দাস সংবাদসংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, 'বাংলাদেশে ইসকন নামহট্ট সেন্টারে আগুন লাগানো হয়েছে। লক্ষ্মী নারায়ণের মূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।' এই নিয়ে এক্স হ্যান্ডলে সরব হয়েছেন তিনি।
এদিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'ললিপপ' মন্তব্য নিয়ে এবার সরব হলেন বাংলাদেশে বিএনপি নেতা রুহুল কবীর রিজভি। এই নিয়ে মমতাকে রীতিমতো নিশানা করেছেন বাংলাদেশি নেতা। বলেছেন, 'ভারত যদি আগ্রাসন দেখায় এবং চট্টগ্রাম দখলের কথা ভাবে, তা হলে বাংলাদেশও বসে থাকবে না।'
গত অগাস্ট মাসে বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের জেরে পতন হয়েছে হাসিনা সরকারের। প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়েই দেশ ছেড়েছেন হাসিনা। বর্তমানে তিনি ভারতে রয়েছেন। হাসিনা সরকারের পতনের পর পরই ওপার বাংলায় নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। অভিযোগ, হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই সে দেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়নের ঘটনা বেড়েছে। সম্প্রতি হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারির পর থেকেই নতুন করে অশান্ত ওপার বাংলা।