বাংলাদেশে কি ফের সেনা হস্তক্ষেপের দিন ফিরে আসছে? অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসের কানের কাছে যেন এখন ‘বিদায়ের ঘণ্টা’ বাজছে। কারণ সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আর চুপ করে বসে নেই। একরকম আল্টিমেটাম দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, আর নয়, এবার ন্যায্য নির্বাচন না হলে সেনাবাহিনী আর চুপ থাকবে না।
মানুষ তখন ভেবেছিলেন, তিনি বুঝি গণতন্ত্র ফেরাবেন
এই উত্তেজনার সূত্রপাত গত বছরের অগাস্টে, শেখ হাসিনার পতনের পর। তীব্র ছাত্র আন্দোলনের মুখে হাসিনা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। সেই শূন্যতা পূরণে সামনে আসেন ইউনূস—বিশ্ববিখ্যাত নোবেলজয়ী, মানুষ তখন ভেবেছিলেন, তিনি বুঝি গণতন্ত্র ফেরাবেন। কিন্তু বাস্তব ছবিটা ধীরে ধীরে বদলাতে থাকে। নির্বাচন তো দূরের কথা, ইউনূস বরং শুরু করলেন বেশ কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত। সবচেয়ে চমকে দিয়েছিল বিডিআর বিদ্রোহীদের মুক্তি। মনে আছে ২০০৯ সালের সেই রক্তাক্ত বিদ্রোহ? যেখানে ৫৭ জন সেনা অফিসার-সহ ৭৩ জন খুন হয়েছিলেন। সেই ঘটনার দোষীদেরই একে একে জেল থেকে ছাড়তে শুরু করেন ইউনূস।
তার উপর, প্রায় ৪০০ কট্টর ইসলামপন্থী, যাঁদের মধ্যে আছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নেতাও—তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। হিজবুত তাহরিরের মতো দল, যাদের সঙ্গে ইউনূস সরকারের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলেই শোনা যাচ্ছে, তারাও এই মুক্তিকে স্বাগত জানায়। সেনাবাহিনীর কাছে এ একেবারে ‘লাল কাপড় দেখানোর মতো’। কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হল, যখন ইউনূসের সামরিক উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল হাসান গোপনে মার্কিন দূতাবাসে গিয়ে নাকি আমেরিকার কাছে নতুন সেনাপ্রধান হওয়ার অনুমোদন চাইলেন! সেনাপ্রধান ওয়াকার সেটা জানতে পেরে তাঁকে সরানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু ইউনূস তা আটকে দেন।
সেনাবাহিনী রীতিমতো নিজেদের ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছে
এরপর থেকে দ্বন্দ্ব একেবারে প্রকাশ্যে। সেনাবাহিনী রীতিমতো নিজেদের ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছে। নৌ ও বায়ুসেনার সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে। গোয়েন্দা বিভাগকেও পাশে আনছেন জেনারেল ওয়াকার। ইউনূস যাতে হঠাৎ করে সেনাপ্রধান বদলে দিতে না পারেন, তার জন্য তিনি রাষ্ট্রপতির সমর্থনও পেয়ে গেছেন বলে খবর। তাঁর বাসভবনের সামনে জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে—তাতে বোঝাই যাচ্ছে, সেনাপ্রধান যে কোনও মুহূর্তে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত।
জেনারেল ওয়াকার শুধু সেনাপ্রধানই নন
এরই মধ্যে ইউনূস এমন একটি পরিকল্পনা করছেন, যাতে সংবিধান কার্যত বাতিল হয়ে যাবে এবং রাষ্ট্রপতির পদটাও বিলুপ্ত হবে। এই ফাঁকে তিনি ওয়াকারকে সরিয়ে কামরুল হাসানকে বসাতে পারেন—এটাই তাঁর ‘গেমপ্ল্যান’। কিন্তু ওয়াকার কি সহজে সরবেন? বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এটিই। মনে রাখতে হবে, জেনারেল ওয়াকার শুধু সেনাপ্রধানই নন, তিনি শেখ হাসিনার আত্মীয়ও। অতীতে হাসিনার অধীনে কাজ করেছেন। তাই তাঁকে সরানো মানে শুধু একজন অফিসারকে নয়, একটা গোটা ক্ষমতা কাঠামোকে আঘাত করা।
তার উপর ইউনূস ঘোষণা করেছেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। বলছেন, জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে এটা জরুরি। কিন্তু তখন কি আর এই নির্বাচন ‘সমন্বিত’ থাকবে? কে মানবে এই ভোট? রাষ্ট্রপতিও এই অবস্থায় সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়িয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। স্বাধীনতা দিবসে তিনি ঘোষণা করেন, 'বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু একে অপরের পরিপূরক।' ইউনূস-ঘনিষ্ঠ ছাত্র সংগঠন ও ইসলামপন্থীদের উদ্দেশে স্পষ্ট বার্তা। সব মিলিয়ে এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। সেনাপ্রধানের ‘ডেডলাইন’ সামনে, ইউনূস তাঁর ‘সংবিধান পরিবর্তন’ কৌশলে ব্যস্ত। কিন্তু সাধারণ মানুষের প্রশ্ন—গণতন্ত্রের নামে কি আবারও একনায়কতন্ত্র ফিরে আসছে?