বাংলাদেশে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে গঠিত হল অন্তর্বর্তী সরকার, যার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে আয়োজিত এক শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান। অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের আরও ১৬ জন উপদেষ্টাও শপথ গ্রহণ করেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ড. আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান, এবং সৈয়দা রেজওয়ানা হাসানসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
মুহাম্মদ ইউনূসকে তার নতুন দায়িত্ব গ্রহণের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, 'আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা। আমরা হিন্দু এবং অন্যান্য সমস্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করে স্বাভাবিক অবস্থায় দ্রুত ফিরে আসার আশা করি। শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য আমাদের উভয় জনগণের আশা-আকাঙ্খা পূরণে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।'
ড. ইউনুস তার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই দেশের জনগণের প্রতি আস্থা রাখার আহ্বান জানান এবং দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেন যে কারও ওপর হামলা হবে না। তিনি আন্দোলনকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, "নতুন বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন বিজয় দিবস শুরু করল। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।"
বাংলাদেশে বিগত কয়েক মাস ধরে চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে দেশের পরিস্থিতি ক্রমশ অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সোমবার দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। তার পদত্যাগকে আন্দোলনকারীরা তাদের জয়যাত্রার প্রথম ধাপ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং দেশের শাসন ব্যবস্থার সংস্কারের দাবি জানায়।
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীদের সমর্থনে সংসদ ভেঙে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেন। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৩ জন সমন্বয়ক। বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত এই অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশকে নতুন পথে পরিচালিত করতে সক্ষম হবে কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়। দেশটির চলমান অশান্তি ও রাজনৈতিক বিভাজন থামাতে এই সরকারের কার্যকারিতা কতটা সফল হয়, সেটাই এখন সময়ই বলবে।