
ডাঙায় ভারত বিরোধী স্লোগান ও বিক্ষোভ। বাদ নেই জলভাগও। সমুদ্রপথেও উস্কানির অভিযোগ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। বঙ্গোপসাগরে ভারতীয় জলসীমা লাগোয়া এলাকায় গত কয়েকদিনে ক্রমাগতই বেড়েছে বাংলাদেশি মৎস্যজীবীদের নৌকার অনুপ্রবেশ। তার পাশাপাশি সম্প্রতি জলসীমান্তে, একটি ভারতীয় ট্রলারকেই ধাক্কা দেয় বাংলাদেশ নেভির জাহাজ। উল্টে যাওয়া ট্রলারের মৎস্যজীবীদের অন্ধকার সমুদ্রের জলে ফেলে রেখেই পালিয়ে যায় বাংলাদেশের নৌবাহিনীর জাহাজ। একের পর এক এহেন ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্রমেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে কূটনৈতিক মহলে।
গত দু’মাসে বঙ্গোপসাগরে একটি ‘অস্বাভাবিক প্যাটার্ন’ লক্ষ্য করছে ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলি। অভিযোগ, প্রায়শই বাংলাদেশের ট্রলার ভারতের এক্সক্লুসিভ ইকনমিক জোন (EEZ) এ ঢুকে পড়ছে। এরই মধ্যে গত ১৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশের নৌবাহিনীর একটি টহলদারি জাহাজ একটি ভারতীয় ট্রলারকে ধাক্কা মারে বলে অভিযোগ। সেই ট্রলারে ১৬ জন মৎস্যজীবী ছিলেন। ঘটনাটি ঘটে পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের কাছে আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সীমান্ত এলাকায়।
‘এফবি পারমিতা’ নামের ওই ট্রলারটি উল্টে যায়। সকলেই সমুদ্রে পড়ে যান। পরদিন সকাল ছ’টা নাগাদ ভারতীয় কোস্ট গার্ড ১১ জনকে উদ্ধার করলেও এখনও পাঁচ জন নিখোঁজ। বেঁচে ফেরা মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, ট্রলারে থাকা সকলকে মারার চেষ্টা হয়েছিল। নিহত মৎস্যজীবীর নাম রাজদুল আলি শেখ বলে দাবি করা হয়েছে।
সুন্দরবন মেরিন ফিশারম্যান ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। যদিও ভারতীয় কোস্ট গার্ড এখনও নিশ্চিত করে বলেনি, ট্রলারটি সীমান্ত পেরিয়েছিল কি না, নাকি বাংলাদেশি জাহাজই ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে পড়েছিল। অন্য দিকে, ঢাকা এই অভিযোগকে ‘ভ্রান্তিকর’ বলে দাবি করেছে। বাংলাদেশের বক্তব্য, তাদের টহলদারি জাহাজ ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১২ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আরও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান। চলতি মাসের ১৬ ডিসেম্বরই ভারতীয় কোস্ট গার্ড দু’টি বাংলাদেশি মাছ ধরার নৌকা আটক করেছে ভারতীয় জলসীমায় অনুপ্রবেশের অভিযোগে। গত কয়েক মাসে অন্তত আটটি বাংলাদেশি নৌকা এবং প্রায় ১৭০ জন মৎস্যজীবীকে আটক করেছে ভারত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতির নেপথ্যে রয়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক টানাপড়েন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরে ভারত-বিরোধী সুর আরও তীব্র হয়েছে। নির্বাচনের আগে সেই আবহ আরও ঘনীভূত। পাকিস্তান ও চিনের সঙ্গে ঢাকার ঘনিষ্ঠতা, পাক নৌপ্রধানের সাম্প্রতিক ঢাকা সফর এবং কট্টরপন্থী সংগঠনগুলির সক্রিয়তাও নয়াদিল্লির উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
একাধিক বিদেশনীতি বিশেষজ্ঞের মতে, বঙ্গোপসাগরে এই ধরনের ঘটনা পরিকল্পিত উসকানি হতে পারে। সামাজিক মাধ্যমে একে ‘ভারতকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা’ বলেও বর্ণনা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে, স্থল ও জল, দু’দিক থেকেই তৈরি হওয়া এই চাপ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে নতুন করে পরীক্ষার মুখে ফেলছে বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল।