
সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের উদ্বেগকে কার্যত নাকচ করে দিল ঢাকা। রবিবার বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সাম্প্রতিক হামলার ঘটনাগুলি 'বিচ্ছিন্ন অপরাধমূলক ঘটনা'। তাদের দাবি, কোনওভাবেই এগুলিকে প্রাতিষ্ঠানিক বা সামাজিক নির্যাতন বলা যায় না। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মন্তব্যকে 'ভুল তথ্যের ভিত্তিতে' এবং 'অতিরঞ্জিত' বলে ব্যাখ্যা করেছে বাংলাদেশ।
ঢাকার বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র যে মন্তব্য করেছেন, তা বাস্তব পরিস্থিতির প্রতিফলন নয়। বরং কিছু ঘটনা বেছে নিয়ে এমনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, যাতে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে প্রশ্নের মুখে ফেলা যায়। বিবৃতিতে দাবি, “বাংলাদেশ সরকার স্পষ্ট ভাবে সেই সব ভুল, অতিরঞ্জিত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বয়ান প্রত্যাখ্যান করছে, যা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সহাবস্থানের ইতিহাসকে বিকৃত ভাবে তুলে ধরছে।”
এই কড়া প্রতিক্রিয়া এসেছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের সাম্প্রতিক মন্তব্যের পরেই। দু'দিন আগে নয়াদিল্লি জানায়, বাংলাদেশে 'র্যাডিক্যাল এলিমেন্ট'-এর হাতে হিন্দুদের উপর হামলা 'গ্রহণযোগ্য নয়'। একই সঙ্গে ভারত আশা প্রকাশ করে, এই ঘটনার সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুধু হিন্দুরাই নন, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়েও ভারত গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল এবং ঢাকাকে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছিল।
ভারতের বক্তব্যে বিশেষ ভাবে উঠে আসে ময়মনসিংহে ১৮ ডিসেম্বর ২৭ বছরের হিন্দু গার্মেন্টস কর্মী দীপু চন্দ্র দাসের লিঞ্চিংয়ের ঘটনা। ওই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ভারত জানায়, দোষীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি, রাজবাড়ি জেলায় চলতি মাসে আর এক হিন্দু ব্যক্তির উপর প্রাণঘাতী হামলার প্রসঙ্গও তুলে ধরে ভারত। নয়াদিল্লির দাবি, স্বাধীন সূত্রে গত কয়েক মাসে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার হিংসাত্মক ঘটনার তথ্য মিলেছে; যার মধ্যে খুন, অগ্নিসংযোগ এবং জমি দখলের মতো অভিযোগ রয়েছে।
এই সব অভিযোগের জবাবে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক দাবি করেছে, কিছু বিচ্ছিন্ন অপরাধকে 'সংখ্যালঘু নির্যাতন'-এর তকমা দিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে তুলে ধরার জন্য 'পদ্ধতিগত প্রচেষ্টা' চলছে। ঢাকার অভিযোগ, এই ধরনের বয়ান ইচ্ছাকৃত ভাবে ছড়ানো হচ্ছে, যাতে বাংলাদেশ, তার জনগণ এবং এমনকি ভারতে অবস্থিত কূটনৈতিক মিশনের বিরুদ্ধে শত্রুতা উসকে দেওয়া যায়।
একটি নির্দিষ্ট ঘটনার ব্যাখ্যা নিয়েও ভারতের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছে বাংলাদেশ। ঢাকার দাবি, যে ব্যক্তির মৃত্যুর কথা তুলে ধরা হয়েছে, তিনি একজন তালিকাভুক্ত অপরাধী ছিলেন এবং এক মুসলিম সহযোগীর সঙ্গে চাঁদাবাজির সময় মৃত্যু হয় তাঁর। ওই সহযোগীকে পরে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানানো হয়। এই ঘটনাকে সংখ্যালঘু নির্যাতনের উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা 'ভ্রান্তিকর এবং তথ্যভিত্তিক নয়'; এমনটাই দাবি বাংলাদেশের।