আসছে উৎসবের মরশুম ৷ সামনেই দুর্গাপুজো ৷ উৎসবের দিনে বিশেষ খানাপিনা ছাড়া কি চলে! আসলে বাঙালির এই বিশেষ উৎসব যাতে আরও মুখর হয়ে ওঠে, তার জন্য রাজকীয় ভূরিভোজ অপরিহার্য । ভূরিভোজের জন্য বাঙালির রান্নাঘরে ইলিশ মাছের পদ হবে না তাই কি কখনও হয় ? বাংলার সংস্কৃতিতে ইলিশ শুধু এক ধরনের মাছ নয়, বাঙালির আবেগের সঙ্গে মিশে থাকা 'মাছের রাজা'। পশ্চিম বঙ্গের বাঙালিরা ইলিশ মাছ বলতেই বোঝে পদ্মার সুস্বাদু রুপোলি ইলিশ। গত কয়েক বছর ধরে ঠিক পুজোর আগেই পশ্চিমবঙ্গে বাঙালির পাতে পড়েছে বাংলাদেশের সুস্বাদু ইলিশ। সেই ধারা বজায় থাকবে এবারও। বাংলাদেশ সরকার সোমবার পুজোর আগে ইলিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে। এক্সপোস্টে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন দিল্লিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ।
এর আগে বাংলাদেশের একাধিক সংবাদ মাধ্যমে দাবি করা হয়েছিল, কলকাতার বাংলাদেশ উপ দূতাবাসের তরফে জানা গেছে, দুর্গাপুজোর আগেই ভারতে আসছে তিন হাজার মেট্রিক টন পদ্মার ইলিশ। উপ দূতাবাস সূত্রে খবর, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ইলিশ পাঠানোর ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েছে। আর তা কলকাতা সংলগ্ন পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ঢুকবে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি বা তৃতীয় সপ্তাহ থেকে। পশ্চিমবঙ্গের ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সেক্রেটারি সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ গত অগাস্ট মাসে চিঠি দিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। চিঠিতে পাঁচ হাজার টন ইলিশ আমদানির জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। জানা যাচ্ছে, সেই আবেদনের পর তিন হাজার টন ইলিশ মঞ্জুর করেছে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়।
প্রসঙ্গত, পদ্মার ইলিশের আলাদাই খ্যাতি। যেমন রূপ, তেমন তার স্বাদ। একটা সময় বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ আসার ক্ষেত্রে তেমন কোনও বিধিনিষেধ ছিল না। প্রতি বছরই বর্ষার এলে বাংলাদেশের ইলিশ পড়ত এপার বাংলার পাতে। ২০১২ সাল থেকে সে ছবিতে বদল আসে। সেই সময় বাংলাদেশের মসনদে হাসিনা সরকার। ভারতে ইলিশ রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। আসতে আসতে পশ্চিমবঙ্গে পদ্মার ইলিশ রফতানি বন্ধই হয়ে যায়। তবে ২০১৮ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তির পর আবারও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে ইলিশ পাঠাতে রাজি হন। ঠিক হয় ফি বছর দুর্গাপুজোর আগে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ সরকার এক মাসের জন্য ৫০০০ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানি করবে। তবে গত বছর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদল, অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে দেশের শাসন যাওয়ার পর ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনও নিশ্চিত ছিল না, ইলিশ আসবে কি না। তবে শেষ মুহূর্তে ইউনূস-সরকার চিঠি দিয়ে জানায় ইলিশ পাঠাবে তারা। এবারও সেই ধারা অব্যাহত রাখতে চলেছে ইউনূস সরকার। এর আগে মহম্মদ ইউনুসের সরকার বাংলাদেশের সুস্বাদু আম পাঠিয়েছিল ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীদদের। শেখ হাসিনা সরকারের সময় চালু হওয়া আম ও ইলিশ কূটনীতি ইউনুস সরকারও বজায় রাখছে।