Advertisement

Bangladesh 50th Victory Day: আত্মসমর্পণ ৯৩ হাজার পাক সেনার, স্বর্ণালী পঞ্চাশে ফিরে দেখা বিজয় দিবসের ইতিহাস

আজ গৌরবময় বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ শেষে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বর্তমান যা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হিসেবে পরিচিত আত্মসমর্পণ করেছিল পাক বাহিনী। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজি ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সেনা কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

আজ গৌরবময় বিজয় দিবসআজ গৌরবময় বিজয় দিবস
সুমনা সরকার
  • কলকাতা,
  • 16 Dec 2021,
  • अपडेटेड 8:46 AM IST
  • বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৬ ডিসেম্বর একটা বিশেষ দিন
  • আজ সেই গৌরবময় বিজয় দিবস
  • ১৯৭১ সালের এই দিনে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ শেষে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করেছিল পাক বাহিনী

আজ গৌরবময় বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ শেষে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বর্তমান যা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হিসেবে পরিচিত  আত্মসমর্পণ করেছিল পাক বাহিনী। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতায় মিত্রশক্তি হিসেবে এগিয়ে এসেছিল ভারত। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে ভারতীয় সেনাবাহিনী অংশ নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। যার ফলশ্রুতি  চূড়ান্ত বিজয়ের মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় ঘটে বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। দেখতে দেখতে সেই বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তির দিন আজ। 

 

ফিরে দেখা সেই ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৬ ডিসেম্বর একটা বিশেষ দিন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর নয় মাস যুদ্ধের শেষে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ও ভারতের একত্রে গঠিত যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। তবে সহজ ছিল না নয় মাসের সেই লড়াই। যার শুরুটা হয়েছিল  ওই বছরের ২৫ মার্চ। 'অপারেশন সার্চলাইট' নাম দিয়ে পাকিস্তানি সেনা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছিল। এর ঠিক নয় মাস পর পূর্ব পাকিস্তানে (আজ বাংলাদেশ) পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজি ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সেনা কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেন। ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জেনারেল নিয়াজি আত্মসমর্পণপত্রে স্বাক্ষর করেন। যুদ্ধে ভারত জয়ী হয়। প্রতি বছর বাংলাদেশ ও ভারত  এই দিনটিকে বিজয় দিবস হিসেবে পালন করে।

আরও পড়ুন

 

 

খলনায়ক ইয়াহিয়া খান
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ও সামরিক শাসক ছিলেন জেনারেল ইয়াহিয়া খান। তার আদেশেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশে হত্যাযজ্ঞ চালায়। এশিয়া টাইমসের রিপোর্টে বলা হয়েছিস পাক সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে এই ইয়াহিয়া খান বলেছিলেন, "তিরিশ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করো, তখন দেখবে বাকিরা আমাদের হাত চাটবে।" সেই পরিকল্পনা মতোই ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইট আরম্ভ করে, যার উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দেওয়া। এরই অংশ হিসাবে পাক সামরিক বাহিনীতে বাঙালি সদস্যদের নিরস্ত্র করে হত্যা করা হয়, বুদ্ধিজীবিদের নিধন করা হয়। আর তৎকালীন সারা পূর্ববঙ্গ জুড়ে চলে নির্বিচারে সাধারণ মানুষকে হত্যা। 

Advertisement

 

ইয়াহিয়া খান

 

মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু
২৫ মার্চের রাতেই শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। বলা হয়, গ্রেফতার হওয়ার একটু আগে ২৫ মার্চ রাত ১২টায় (অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে) তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন। এরপর দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।

 

 

শুরুটা হয়েছিল দেশভাগের পরেই
১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভক্ত হয় এবং পূর্ব বাংলাকে নিয়ে পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়। তখন থেকেই পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী বাঙালির ওপর শোষন ও নির্যাতনের স্টিম রোলার চালায়। ৫২-এর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ’৫৬-এর সংবিধান প্রণয়নের আন্দোলন, ’৫৮-এর মার্শাল ’ল বিরোধী আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর বাঙালির মুক্তির সনদ ৬-দফার আন্দোলন, ৬৮-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ’৬৯-এর রক্তঝরা গণঅভ্যুত্থান, ৬-দফা ভিত্তিক ’৭০-এর ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামি লিগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন মুক্তিযুদ্ধকে অবধারিত করে তোলে। এই সব আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাঙালি জাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। এরই প্রেক্ষাপটে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে বন্দি করে রাখা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতেই তাকে রাষ্ট্রপতি করে গঠিত বাংলাদেশের সরকারের অধীনে পরিচালিত দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। এই বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের।

বাংলাদেশের সেনা বাহিনী

৩০ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা
১৯৭১ সালের ১৬  ডিসেম্বর বাঙালি জাতি পরাধীনতার শেকল ভেঙে  প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করে। ২৪ বছরের নাগ পাশ ছিন্ন করে দেখা দেয় এক নতুন সূর্যোদয়। ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমোর সবাই শরিক হয়ে থাকে এ লড়াইয়ে।  ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর প্রায় ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য ভারতীয় সেনা বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এই যুদ্ধ জয়ের কয়েক দিন পরে পূর্ববঙ্গ নাম বদল করে রাখা হয় বাংলাদেশ। এই মুক্তিযুদ্ধ ছিল  ৩০ লাখ শহিদের আত্মদান আর দুই লাখ মা-বোনের ত্যাগের ফসল।

 

মুক্তিযুদ্ধ ও ভারত
১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা বাংলাদেশিদের পূর্ণ সমর্থন করেন তৎকালীন  ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, অসম, মেঘালয় এবং ত্রিপুরার সীমান্তে গড়ে তোলা হয় শরর্ণার্থী শিবির। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে বলিদান গিয়েছে অনেক ভারতীয় প্রাণও। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে শহিদ হয়েছিলেন ভারতের বীরসেনারাও।  ১১টি ভারতীয় সেনা শিবিরে বিমান হামলা করে পাকিস্তান। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হন ৩৯০০ ভারতীয় সেনা এবং আহত হন প্রায় ১০ হাজার জন। শেষে অবশ্য  ভারতের সামনে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেছিল পাকিস্তান। ফলে ভারতীয় সেনার  প্রেক্ষিতেও দিনটি  বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়। সেই অবিস্মরণীয় একাত্তর থেকে আজ বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১। মহান মুক্তিযুদ্ধ বিজয় ও স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রান্ত হচ্ছে এই ডিসেম্বরেই।

Read more!
Advertisement
Advertisement