সরকারি চাকরির আবেদনকারীদের জন্য বিতর্কিত সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। কোটা পদ্ধতি ঘোষণার পর বাংলাদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ হচ্ছে এবং হিংসায় প্রাণ হারিয়েছে শতাধিক মানুষ। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট রবিবার তার রায়ে ৯৩ শতাংশ সরকারি চাকরি মেধাভিত্তিক ব্যবস্থার ভিত্তিতে বরাদ্দের নির্দেশ দিয়েছে। বাকি ৭ শতাংশ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং অন্যান্য ক্যাটাগরিতে লড়াই করা সৈনিকদের আত্মীয়দের জন্য অবশিষ্ট রয়েছে। যে ব্যবস্থাটি বিতর্কিত ছিল তাতে ৩০ শতাংশ চাকরি স্বাধীনতা আন্দোলনের অংশগ্রহণকারীদের আত্মীয়দের জন্য সংরক্ষিত করার আহ্বান জানানো হয়েছিল।
বলাই যায় এই রায় বাংলাদেশে কোটা বিরোধী আন্দোলনে বড় জয়। মুক্তিযোদ্ধা সংরক্ষণ মামলায় রবিবার দুপুরে রায় দিল বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট। এদিন প্রায় তিনঘণ্টা ধরে শুনানি চলে। তার পরই রায় দেয় শীর্ষ আদালত। জানা গিয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা কোটার হার কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবং পড়ুয়াদের ক্লাসে ফিরে যেতে আবেদন জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। রবিবার বাংলাদেশে সংরক্ষণ নিয়ে হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে মামলার শুনানি হয় সুপ্রিম কোর্টে। সে দেশের সুপ্রিম কোর্টের তরফে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দেওয়া হয়। ফিরছে পুরনো নিয়মই। ৯৩ শতাংশ নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে।
কোটা পুর্নবহালের হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করে শীর্ষ আদালত জনাল, এখন থেকে সরকারি চাকরিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে। বাকি সাত শতাংশের মধ্যে পাঁচ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, এক শতাংশ কোটা থাকবে পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর জন্যে আর এক শতাংশ প্রতিবন্ধী-তৃতীয় লিঙ্গ কোটা হিসাবে থাকবে। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে সংরক্ষণ নিয়ে শেখ হাসিনার সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা গত ৫ জুন অবৈধ ঘোষণা করেছিল হাই কোর্ট। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল সরকার। সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, রবিবার বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্টের নির্দেশ। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে, সুপ্রিম কোর্টের রায় কিছুটা গিয়েছে হাসিনা সরকারের পক্ষেই। তবে ২০১৮ সালে হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, হুবহু তা বহাল রাখেনি আদালত। হাই কোর্টের রায় বাতিল করা হয়েছে, তবে সংরক্ষণ ব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিল করা হয়নি। দেশের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মোট সাত শতাংশ সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে পাঁচ শতাংশ সংরক্ষণ থাকবে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য। বাকি দুই শতাংশ থাকবে অন্য শ্রেণির জন্য সংরক্ষিত। ৯৩ শতাংশ নিয়োগই হবে মেধার ভিত্তিতে।
সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত থেকে শিক্ষার্থীদের স্বস্তি!
হাইকোর্ট কোটা সংক্রান্ত সরকারের ২০১৮ সালের সার্কুলার বাতিল করার পর বাংলাদেশে বিক্ষোভ ও হিংসা শুরু হয়। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যারা লড়াই করেছে তাদের পরিবারের জন্য চাকরিতে ৩০ শতাংশ সংরক্ষণের পথ খুলে দিয়েছিল। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে এবং হিংসা শুরু হয়। হিংসায় শত শত মানুষ মারা যাওয়ার পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার কারফিউ জারি করতে বাধ্য হয় এবং শহরে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। হাইকোর্টের সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়। সুপ্রিম কোর্ট মেনে নিয়েছে যে হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত সঠিক নয় এবং দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ করা উচিত নয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জন্য এ সিদ্ধান্তকে বড় ধরনের স্বস্তি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। অ্যাটর্নি জেনারেল হাইকোর্টের আদেশ বাতিলের আবেদন করেছিলেন, যার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত এসেছে। রিজার্ভেশনের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভের পর সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে যে প্রায় সব সরকারি চাকরি মেধার ভিত্তিতে হওয়া উচিত।