
২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বড় ভূমিকা নিয়েছিল সেখানকার ছাত্রসমাজ। তাঁদের সমর্থনেই অন্তর্বতীকালীন প্রধানের আসনে বসেন মহম্মদ ইউনূস। তবে এবার নোবেলজয়ী সেই ইউনূসের বিরুদ্ধেই রাস্তায় নামছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। তবে তা রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক সংস্কারের দাবিতে নয়, সাংস্কৃতি সংরক্ষণের অধিকার পেতে।
ইউনূস ক্ষমতায় আসার পরই কার্যত পরিষ্কার হয়ে যায় তিনি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সংস্কারের নামে একাধিক পরিবর্তন করতে চাইছেন। সেই মতলব সাফ হয়ে যায় যখন তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সঙ্গীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগ পরিকল্পনা বাতিল করে দেন। তখন শিক্ষা দফতরের তরফে জানানো হয়, প্রশাসনিক অসুবিধা এবং বাজেটের সীমাবদ্ধতার কারণে এই সিদ্ধান্ত। তবে, সেটা আসল কারণ নয় বলে দাবি করেন পড়য়ারা। তাঁদের মতে, যেহেতু এই বিষয়গুলো 'ইসলামবিরুদ্ধ' তাই স্কুল থেকে তা পুরোপুরি তুলে দিতে চাইছেন ইউনূস। তাঁর এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ছাত্র আন্দোলনের প্রতীক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় সঙ্গীত এবং গান করেন।
এই বিক্ষোভে ইউনূস বিরোধী একাধিক ব্যানার চোখে পড়ে। যার মধ্যে একটিতে লেখা ছিল, 'আপনি স্কুল থেকে সঙ্গীত নিষিদ্ধ করতে পারেন, কিন্তু আপনি এটি বাংলাদেশীদের হৃদয় থেকে মুছে ফেলতে পারবেন না।'
কেবল ঢাকা নয়, চট্টগ্রাম থেকে রাজশাহির মতো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলিতে প্রতিবাদী বিক্ষোভ চলে। যত দিন যাচ্ছে, বাংলাদেশে এই আন্দোলন তত বাড়ছে। সরকার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে বিক্ষোভের আঁচ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়বে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যশালার অধ্যাপক ইসরাফিল শাহিন বলেন, 'সংস্কৃতি কখনই ধর্মের বিরুদ্ধে নয়। এই সংস্কৃতিই আমাদের জাতীয় পরিচয় গড়ে তোলে। এটা ছাড়া শিক্ষা শূন্য হয়ে যায়।' যদিও সরকার এই প্রতিবাদের কাছে নতি স্বীকার করেনি। তাদের তরফে এই নিয়ে কোনও বিবৃতিও জারি করা হয়নি।
ইউনূস সমালোচকরা প্রকাশ্যেই বলছেন, এই সিদ্ধান্ত থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায় সরকার কতটা মৌলবাদীদের পক্ষে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র সমাবেশে গায়ক ও কর্মী শায়ান বলেন, 'ওই দুই বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে না, তার কারণ বাজেট নয়। সবটাই সরকারের চক্রান্ত। আমরা কারা, বাংলাদেশি হওয়ার অর্থ কী, এগুলো প্রশাসন ও সরকারকে বুঝতে হবে। ধর্ম ও সংস্কৃতিকে একত্রে মিলিয়ে দেওয়ার এক ঘৃণ্য চক্রান্ত চলছে। আমাদের এর ফাঁদে পা দেওয়া উচিত নয়।'
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, যে ইউনূসকে ক্ষমতায় আনতে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী পথে নেমেছিলেন, তাঁরাই আজ ইউনূসের বিপক্ষে। এর থেকেই পরিষ্কার বাংলাদেশে ফের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন অসম্ভব কোনও বিষয় নয়।