গোটা বাংলাদেশে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ট্রেন চলাচল। আর তাতেই চরম ভোগান্তিতে হাজার হাজার মানুষ। বাংলাদেশের রেলওয়ের রানিং স্টাফদের ডাকা কর্মবিরতির কারণে সোমবার মধ্যরাত থেকে সারা দেশে বন্ধ হয়ে গেছে ট্রেন চলাচল। মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন প্রদান এবং আনুষঙ্গিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে জটিলতা নিরসন না হওয়ায় কর্মবিরতিতে নেমেছেন এই কর্মীরা।
সোমবার মধ্যরাতের পর থেকেই র বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া যাত্রীরা। বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি এই ধর্মঘটে নেমেছেন। ফলে সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেন পরিচালকদের সংগঠন রেলওয়ে গার্ডস কাউন্সিল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আফজাল হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন তারা।
তাঁর বক্তব্য, “আমাদের কর্মসূচি চলছে, চলবে, যতক্ষণ না ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের সমস্যাগুলো নিরসন না করবে।” ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেটসহ বাংলাদেশের বড় শহরগুলো থেকে সকালে কোনও ট্রেন ছেড়ে যায়নি। তবে সোমবার রাত ১২টার আগে যেসব ট্রেন বিভিন্ন স্টেশন ছেড়ে গেছে, সেগুলো মঙ্গলবার তাদের গন্তব্য স্টেশনে পৌঁছচ্ছে।
ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বিভিন্ন স্টেশনে এসে ফিরে যাচ্ছেন যাত্রীরা। রেলপথ মন্ত্রক মঙ্গলবার সকালে জানিয়েছে, ট্রেনের যাত্রা বাতিল হলে যাত্রীদের টিকেট ফেরত দেওয়া হবে। রেলপথ মন্ত্রকের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকীর পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের দাবি বহুলাংশে মেনে নেওয়া সত্ত্বেও তারা তাদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি থেকে সরে আসেনি৷ এ কারণে আজ ২৮ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখ থেকে রেল চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে৷ রেল-এর যাত্রা বাতিল হলে পূর্বে ক্রয়কৃত টিকেটের টাকা বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক ফেরত দেবে।”
প্রসঙ্গত, মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিক–সুবিধা দেওয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন রানিং স্টাফরা। গত বুধবার চট্টগ্রামে পুরোনো রেলস্টেশনে সংবাদ সম্মেলন করে ২৭ জানুয়ারির মধ্যে দাবি মানার শর্ত দেয় রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন। অন্যথায় ২৮ জানুয়ারি থেকে রেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা করে তারা। এই রানিং স্টাফরা হলেন গার্ড, ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার), সহকারী চালক ও টিকিট পরিদর্শক (টিটিই)। তাঁরা সাধারণত দীর্ঘ সময় ট্রেনে দায়িত্ব পালন করেন। দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে বেসিকের (মূল বেতন) হিসেবে বাড়তি অর্থ পেতেন তাঁরা। এ ছাড়া অবসরের পর বেসিকের সঙ্গে এর ৭৫ শতাংশ অর্থ যোগ করে অবসরকালীন অর্থের হিসাব হতো। তবে ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর এই সুবিধা সীমিত করে অর্থ মন্ত্রক। রেলপথ মন্ত্রকের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যকে বনেছেন, তাঁর মন্ত্রক আন্দোলনরত কর্মীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছে। ট্রেন বন্ধ করে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে না ফেলার আহ্বান জানান তিনি।