মাদক আইনের মামলায় ফের একবার জেলেই যেতে হল ঢাকাই সিনেমার অভিনেত্রী পরীমনিকে। যদিও সিআইডি শনিবার পরীমনিকে নিজেদের হেফাজতে চায়নি। তবে ঢাকা মহানগরের হাকিম আশেক ইমাম তাঁকে জেলে পাঠানোরই নির্দেশ দেন। তাৎপর্যের বিষয়, পরীমনির আইনজীবী মজিবুর রহমান শনিবার আদালতে নায়িকার জন্য জামিনের আবেদন করেননি। আর তাতেই মেজাজ হারালেন অভিনেত্রী।
আদালতে কী বললেন পরীমনি?
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমামের আদালতে শুনানির পর পরীমনি তার আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভি ও কামরুজ্জামান চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, 'আপনারা জামিন চান না কেন? আমি তো পাগল হয়ে যাবো। আপনারা বুঝতে পারছেন, আমার কী কষ্ট হচ্ছে?' এর আগে, দুপুরে পরীমনির আইনজীবীরা আদালতকে জানান, তাদেরকে পরীমনির সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। মামলার ব্যাপারে আলোচনা করার সুযোগ চেয়ে তারা আদালতে বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে পরীমনির আত্মপক্ষ সমর্থনের আইনগত অধিকার রয়েছে। পরীমনির আইনজীবীরা আরও বলেন, লাইফ স্টাইলে পরিবর্তন আসার কারণে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ্ হয়ে পড়েছেন।
পরীমনির জামিনের জন্য আবেদন করেননি আইনজীবী
তৃতীয় দফায় এক দিনের রিমান্ড শেষে শনিবার আদালতে হাজির করা হয় পরীমনিকে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক কাজী গোলাম মোস্তফা ফের রিমান্ড না চেয়ে পরীমনিকে জেলে আটক রাখার আবেদন করেন। তবে পরীমনির আইনজীবী মজিবুর রহমান জামিনের আবেদন করেননি। তিনি আদালতে জানান, তারা জামিন আবেদন করবেন না। পরীমনিকে যেন আদালতে তোলা হয় এবং তার উপস্থিতিতে যাতে শুনানি করা হয়, সেই আবেদন তারা করবেন।
জামিনে মুক্তি পেলে পালাতে পারেন পরীমনি
মাদক মামলায় তৃতীয় দফা রিমান্ডে নায়িকা পরীমনি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক কাজী গোলাম মোস্তফা। সেই সঙ্গে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নায়িকা পরীমনিকে কারাগারে আটক রাখার জন্য আদালতে আবেদন করেন তিনি। তাঁর আশঙ্কা, জামিনে মুক্তি পেলে পালাতে পারেন অভিনেত্রী।
গত ৪ অগাস্ট ঢাকার বনানীর বাড়ি থেকে নায়িকা পরীমনিকে বিপুল মাদকসহ গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। পরদিন তার বিরুদ্ধে বনানী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়। এরপর গত ৫ অগাস্ট তাকে চার দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। সেই রিমান্ড শেষে গত ১০ আগস্ট বনানী থানার মামলায় পরীমনির দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস। গত বৃহস্পতিবার (১৯ অগাস্ট) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম পরীমনিকে এক দিনের রিমান্ড দেন। সে দিনই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) রিমান্ড কার্যকর করতে পরীমনিকে নিয়ে যায়। সবশেষ ২১ অগাস্ট তৃতীয় দফার রিমান্ড শেষে পরীমনিকে আবার জেলে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।
পরীমনির জন্য রাজপথে নাগরিক সমাজ
পরীমনির মুক্তির দাবিতে শনিবার বিকেলে ঢাকার রাজপথে সমাবেশ করল নাগরিক সমাজ। ‘শিল্পীর পাশে’ শিরোনামের ব্যানারে শাহবাগ জাদুঘরের সামনে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। কর্মসূচির আহ্বায়ক নাট্যনির্মাতা মোস্তাফা মনন। সমাবেশে উপস্থিত হয়ে পরীমনির জামিন ও ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের শিল্পী সমাজ। পাশাপাশি রাজপথে থেকেই এর সুরাহা করবেন বলেও হুঙ্কার দিয়েছেন সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষেরা। সমাবেশে পরীমনির ন্যায্য বিচারের দাবিতে চলচ্চিত্র নির্মাতা গাজী মাহবুব, গিয়াস উদ্দিন সেলিম, নোমান রবিন, শহিদ উন নবী, আজাদ আবুল কালাম, কাজী রোকসানা রুমা, রাজ রিপা, সেতু আরিফ, অপরাজিতা সঙ্গীতা, নাট্যব্যক্তিত্ব ঝুনা চৌধুরী ,জয়িতা মহলানবিশসহ অনেক গুণী পরিচালক, শিল্পী, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।