বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রামের হাজারী গলি এলাকায় সম্প্রতি এক সামাজিক মিডিয়া পোস্টকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং এরপর নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়ন হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
৫ নভেম্বর, ঘটনাটি শুরু হয় জামাত-ই-ইসলামীর একজন সদস্য ওসমান আলী ফেসবুকে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) এবং হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য পোস্ট করলে। তার ওই পোস্টের জেরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ প্রতিবাদে তার দোকানের সামনে জড়ো হন, যা দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষের রূপ নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখতে দ্রুত সেনাবাহিনী-সহ নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন এই ঘটনার ভিডিও শেয়ার করে বলেছেন, 'হাজারী লেন, চট্টগ্রাম আজ। হিন্দু বনাম মিলিটারি।' ওই ফুটেজে দেখা গেছে যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বেসামরিক ব্যক্তিদের ধাওয়া করছেন, লাঠিপেটা করছেন এবং তাদের ছত্রভঙ্গ করতে শূন্যে গুলি ছুড়ছেন। যদিও ভিডিওটির সত্যতা 'বাংলা ডট আজতক ডট ইন' যাচাই করেনি। 'প্রথম আলো' পত্রিকার খবরে জানানো হয়েছে যে, নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সদস্য সিসিটিভি ক্যামেরাও ভেঙে ফেলেন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিক্ষোভকারীদের ইট ও অ্যাসিড ছোঁড়ায় ৯ জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। ঘটনার পরে নিরাপত্তা বাহিনী ৫৮২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। এবং ৪৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। তবে স্থানীয় হিন্দু নেতারা অভিযোগ করেছেন যে, দুই সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ থাকলেও নির্দিষ্টভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
হাজারী গলি, যা ঐতিহাসিকভাবে হিন্দু-অধ্যুষিত ব্যবসায়িক এলাকা, বর্তমানে কঠোর নজরদারির মধ্যে রয়েছে। অনেক বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন যে, তারা অবাধে চলাফেরা করতে পারছেন না এবং পুলিশ বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে। ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন আরও তীব্র হয়েছে।শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ দল ঐতিহ্যগতভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের সমর্থন পেয়েছে, তবে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী এই সমর্থনের ভবিষ্যতকে অনিশ্চিত করেছে।
এদিকে, নোবেল জয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার এই হামলার নিন্দা করেছে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।