বাংলাদেশের অনুরোধে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মায়ানমারে ফেরাতে সহায়তা করতে সম্মত হয়েছে চিন। এ ছাড়া বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্যের প্রায় ৯৯ শতাংশ শুল্কমুক্ত আমদানির সুবিধা দিতেও সম্মত হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, চিনের এসব ছাড় বাংলাদেশের বেজিং-এর ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াবে। অন্যদিকে বাংলাদেশে চিনের প্রভাব বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রবিবার ঢাকা সফরে আসেন চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। এখানে তিনি বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমিনের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত পাঠাতে চিনের সহায়তা কামনা করেন মোমিন। মায়ানমারের ওপর চিনের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হয়। তাই শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে চিন সহায়ক হতে পারে। ২০১৭ সাল থেকে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে বসবাস করছে। রোহিঙ্গারা হলেন সেই মুসলিম যারা মায়ানমারের সামরিক বাহিনী ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কথিত নিপীড়নের কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন।
এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চfন ইতিমধ্যেই রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে এর জন্য প্রায় তিন হাজার বাড়ি তৈরি করা হয়েচে। ওয়াং মোমিনকে আশ্বস্ত করেন যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরার পর প্রাথমিক দিনগুলোতে চিন তাদের খাবারের ব্যবস্থা করবে।
চিনে বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ও বর্তমানে কূটনৈতিক বিশ্লেষক মুন্সী ফয়েজ আহমেদের মতে, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ চিনের ওপর নির্ভরশীল। ২০১৭ সালের নভেম্বরে চিনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যে শরণার্থীদের ফেরত নিয়ে একটি চুক্তি হয়েছিল। এর পরে ২০১৯ সালে, এই উদ্দেশ্যে আবার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে অনাগ্রহের কারণে দুই দফায় এ কাজ করা সম্ভব হয়নি। উদ্বাস্তুরা তখন আশঙ্কা করেছিল যে তারা ফিরে গেলে তাদের ওপর আবার হামলা হবে। মায়ানমারে গত বছরের সামরিক অভ্যুত্থান এ কাজে নতুন সমস্যার সৃষ্টি করে।
এদিকে ঢাকা সফরে ওয়াং বাংলাদেশকে আরও বেশ কিছু ছাড় দেওয়ার ঘোষণা করেন। এর মধ্যে রয়েছে ৯৯ শতাংশ পণ্যের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ এ সুবিধা পেতে শুরু করবে। এখানে অনুষ্ঠিত আলোচনার পরে, উভয় দেশ ঘোষণা করেছে যে তারা তাদের সম্পর্কের মর্যাদা একটি 'নতুন স্তরে' উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওয়াংয়ের সফরে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করার জন্য চারটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
ওয়াংয়ের সফরের ঠিক আগে বাংলাদেশ 'এক চীন নীতি' সমর্থন করে একটি বিবৃতি জারি করে। তাইওয়ান নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কের মধ্যে দেশটি প্রকাশ্যে চীনকে সমর্থন করছে। বাংলাদেশের সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ওয়াং বাংলাদেশের এই অবস্থানের প্রশংসা করেছেন। তিনি দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ওয়াংয়ের এই সফর বাংলাদেশে চিনের প্রভাব বাড়াবে বলে মত প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।