
দীপুর হত্যা। সংখ্যালঘুদের উপর নৃশংস অত্যাচার। এদিকে তার প্রতিবাদ করলেই 'নিরাপত্তা লঙ্ঘনে'র নালিশ। বাংলাদেশের আরও এক নির্লজ্জ প্রোপাগান্ডা খারিজ করল ভারত। বরং এই সময়ে বাংলাদেশের কর্তব্য মনে করাল নয়াদিল্লি। দীপু চন্দ্র দাসের হত্যাকাণ্ডে দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাল বিদেশমন্ত্রক।
সম্প্রতি বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হিংসার বলি হন হিন্দু যুবক। প্রতিবাদে ভারতে, দিল্লিতে বাংলাদেশের হাই কমিশনের সামনে বিক্ষোভ হয়। পড়শি দেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তার দাবিতে স্লোগান দেন জনা ২৫ যুবক। কিন্তু সেই সামান্য প্রতিবাদকেই বাড়িয়ে দেখাতে শুরু করে বাংলাদেশের বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম। দাবি করা হয়, তাদের হাই কমিশনের নিরাপত্তা বলয় ভাঙার চেষ্টা হয়েছে। অথচ তেমন কিছুই যে আদতে ঘটেনি, তা সাফ জানিয়ে দিল নয়াদিল্লি। রবিবার বিদেশমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হয়েছে। তাও খুব অল্প সময়ের জন্য। এতে কোনও নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়নি। সবই যে বাংলাদেশের হিংসা ছড়ানোর প্রোপাগান্ডা, সেটাই আবারও ফাঁস হয়ে গেল, মত বিশ্লেষকদের।
বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানান, বাংলাদেশের ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাস নামে এক হিন্দু যুবককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তার প্রতিবাদে এবং সে দেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার দাবিতে গত ২০ ডিসেম্বর মাত্র ২০-২৫ জন যুবক জড়ো হন। নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাই কমিশনের সামনে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের দাবি ছিল, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনায় পদক্ষেপ করা হোক।
জয়সওয়ালের কথায়, '২০, ২৫ জন যুবক বাংলাদেশের হাই কমিশনের সামনে স্লোগান দেন। কিন্তু নিরাপত্তা বলয় ভাঙার চেষ্টা হয়নি। আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়নি।' তিনি জানান, ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়। গোটা ঘটনার ভিডিয়ো ফুটেজও রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র আরও বলেন, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী ভারতে অবস্থিত সমস্ত বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ভারতের দায়িত্ব। এই বিষয়ে ভারত সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, মনে করান তিনি।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে নয়াদিল্লি। রণধীর জয়সওয়াল জানান, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের উপর হামলা নিয়ে ভারতের গভীর উদ্বেগ তাদের জানানো হয়েছে। দীপু চন্দ্র দাসের হত্যাকাণ্ডে দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবিও জানানো হয়েছে বলে জানান।
বাংলাদেশে গ্রেফতার ১০
বাংলাদেশ প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস জানান, প্রথমে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (RAB) সাত জনকে গ্রেফতার করে। পরে পুলিশ আরও তিন জনকে আটক করে।
বাংলাদেশ প্রশাসনের দাবি, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে একদল লোক দীপু চন্দ্র দাসের উপর হামলা চালায়। তাঁকে মারধর করে গাছে বেঁধে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। ‘নতুন বাংলাদেশে’ গণপিটুনি কোনও ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়ে দোষীদের কঠোর শাস্তির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
সব মিলিয়ে, দিল্লির বিক্ষোভ এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় নতুন করে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা ুপু হয়েছে। সংখ্যালঘু নিরাপত্তা নিয়ে ঢাকার ভূমিকা যে আন্তর্জাতিক মহলেরও নজরে পড়ছে, তা বলাই বাহুল্য।