কালীপুজোর মাত্র আর কিছুদিনই বাকি। গোটা বাংলা জুড়ে শুরু হবে মায়ের আরাধনা। বাংলার বিখ্যাত কালীমন্দিরগুলিতে ঢল নামবে বহু ভক্তের। পশ্চিমবঙ্গের বুকে কালীমন্দির রয়েছে অসংখ্য। তেমিন প্রতিবেশী বাংলাদেশেও রয়েছে কিছু বিখ্যাত কালী মন্দির। বলা হয়, রমনা কালীমন্দির ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম একটি । এটি রমনা কালী বাড়ি নামেও পরিচিত। প্রায় এক হাজার বছরেরও পুরন বলে বিশ্বাস করা হয় এই কালী মন্দির, কিন্তু ইংরেজ আমলে মন্দিরটি আবার নতুন করে তৈরি করা হয়েছিল।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার রমনা পার্কে (যার বর্তমান নাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ) এই মন্দির অবস্থিত। বর্তমানে বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে এ মন্দিরের উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা আছে। বাংলাপিডিয়া বলছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শণার্থী সম্প্রদায় ঢাকার রমনায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় পাঁচশ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া গড়েন। তখন এ আখড়া কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল। পরে সে জায়গাতেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন, যা তখন পরিচিতি পায় কালিবাড়ী নামে। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে ধ্বংস হয় প্রাচীন এই মন্দির। মন্দির ও আশ্রমে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মন্দিরের সেবায়তসহ প্রায় একশ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সাধারণ মানুষ নিহত হন।
১৯৭১ সালে ‘অপারেশন সার্চালাইট’ নামে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে, পাক সেনা বাহিনী যে অভিযান চালিয়েছিল, তাতে সম্পূর্ণভাবে ওই কালী মন্দিরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। মন্দিরটিতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানি সেনা বাহিনী। এই ঘটনায় মন্দিরে থাকা ভক্তদের পাশপাশি আরও অনেকেরই মৃত্যু হয়েছিল। ভারত সরকারের অর্থানুকূল্যে বর্তমানে সেই মন্দিরের সংস্কার করা হয়েছে। ফিরে এসেছে তার ঐতিহ্যবাহী চূড়ো। ২০২১ সালে বিজয় দিবসের সূবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ঢাকায় গিয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোভিন্দ। সেইসময় রমনা কালীমন্দিরের সংস্কার হওয়া অংশের উদ্বোধন করেন তিনি।
২০১৬ সালে তৎকালীন ভারতীয় বেদশমন্ত্রী সুষমা সরাজের ঐকান্তিক ইচ্ছে ও তত্ত্বাবধানে এবং ভারত সরকারের ৭ কোটি টাকা অনুদানের উপর ভিত্তি করে মন্দিরটি পুনঃনির্মাণ করা হয়। বিশাল এলাকা নিয়ে এই মন্দির । চারপাশ গাছপালায় আবিষ্ট। ছায়াঘেরা পরিবেশ, নগর জীবনের কোলাহল গ্রাস করবে না আপনাকে। আপনি চাইলেই গাছের ছায়ায় বসে যেতে পারবেন। তা ছাড়া মায়ের মন্দিরে গিয়ে মাতৃ মূর্তি দর্শনের পরে সেখানে কিছু সময় প্রার্থনা করে আসতে পারবেন।