আবার বাংলাদেশে রক্তাক্ত পরিস্থিতি। এ বার অকুস্থল গোপালগঞ্জ। সেই গোপালগঞ্জ, যা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার জন্মভিটে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও অসমর্থিত সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের সংখ্যা আরও বেশি। কার্ফু চলছে গোপালগঞ্জে। এহেন পরিস্থিতিতে গণঅভ্যুত্থানের ডাক দিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা ও আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তাহলে কি গোপালগঞ্জের হিংসা শীঘ্রই আরও ভয়াবহ আকার নিতে চলেছে? গোটা বাংলাদেশেই আবার গণহত্যা, লুঠপাট শুরু হতে চলেছে? একাধিক প্রশ্ন উঠছে নাহিদ ইসলামের ফেসবুক বার্তা থেকে।
গণ-অভ্যুত্থানের নামে উস্কানি?
এমনিতেই ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অরাজকতা চলছে বাংলাদেশে। তার উপর দেশটির আর্থিক পরিস্থিতিও বেহাল। জাতীয় নির্বাচনের তোড়জোড় চললেও, কবে নির্বাচন হবে, তার কোনও সুর্নির্দিষ্ট দিন বা মাস বলা যাচ্ছে না। সর্বনেশে আইনকানুনের দেশে পরিণত হওয়া একটি রাষ্ট্রকে যখন শান্তিপূর্ণ ভাবে গঠনের প্রয়োজন, তখন গণঅভ্যুত্থানের উস্কানিমূলক ফেসবুক পোস্ট করা হল। নাহিদের বক্তব্য, গোপালগঞ্জের প্রতিটা ঘরে ঘরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পতাকা উড়বে।
এনসিপি-র আহ্বায়ক নাহিদ লিখছেন, 'গোপালগঞ্জ নিয়ে আমাদের অবস্থান গতকালের বক্তব্যেই পরিষ্কার বলা হয়েছে। পুরা বাংলাদেশের প্রতি আমাদের যে কমিটমেন্ট, গোপালগঞ্জের প্রতিও আমাদের সে কমিটমেন্ট। গোপালগঞ্জের অধিবাসীদের প্রতি রাজনৈতিক বৈষম্য আমরা বিরোধিতা করি। গোপালগঞ্জ ও পুরো বাংলাদেশকে আমরা মুজিববাদী সন্ত্রাস ও ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত করব। আওয়ামী লীগ যুগের পর যুগ ধরে গোপালগঞ্জের মানুষের জীবনকে বিপন্ন করেছে, মুক্তিযুদ্ধকে কলুষিত করেছে এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে বেইনসাফি করেছে। আমরা বলেছি, আমরা এ পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাব। আমরা যুদ্ধের আহ্বান নিয়ে যাই নাই। আমাদের পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ছিল। মুজিববাদী সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে সশস্ত্র হামলা চালায় আমাদের উপরে। যেরকমটা জুলাই গণ–অভ্যুত্থানেও হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সব সময় একটা গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়।' পাঠকের সুবিধার্থে সম্পূর্ণ ফেসবুক পোস্টটিই যুক্ত করা হল।
এই জাতীয় নাগরিক পার্টির সভাকে কেন্দ্র করেই উত্তপ্ত হয়
বস্তুত, এই জাতীয় নাগরিক পার্টির সভাকে কেন্দ্র করেই উত্তপ্ত হয় গোপালগঞ্জ। বুধবার রাত থেকেই কার্ফু চলছে। সংবাদ মাধ্যম বিবিসি-র খবর অনুযায়ী, গোপালগঞ্জের হিংসায় কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তার সংখ্যা স্পষ্ট নয়। এই সমাবেশকে ঘিরে গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্ক ও লঞ্চঘাট এলাকায় দফায় দফায় কয়েক ঘণ্টা ধরে যে সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও গুলি চলেছে, তাতে অন্তত চারজন নিহত।
আদৌ কি কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে?
কিন্তু এখানেই প্রশ্ন, আদৌ কি কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে? নাকি হাসিনা সরকারের পতনের পরে যে অরাজকতা শুরু হয়েছে, তা এবার গৃহযুদ্ধের দিকে যাচ্ছে। ইউনূস সরকারের তরফে একটি দায়সারা বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, গোপালগঞ্জে সংঘটিত সহিংসতা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য। যদিও বিবৃতিতে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে মারা যাওয়ার বিষয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করা হয়নি।
হাসিনার ভিডিও বার্তায় শেখ মুজিবের স্মৃতি
অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশবাসীর উদ্দেশে 'লং মার্চ টু যমুনা'র ডাক দিয়েছেন। বলেছেন, ‘যার যা আছে, তাই নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। এই মুহূর্তে মানুষকে প্রতিবাদে সামিল হতে হবে। এই সরকার মানুষের রাজনৈতিক অধিকার করেছে। তাই এদের উৎখাত করেই ছাড়তে হবে। একটা নতুন দল তৈরি হয়েছে এনসিপি। সব জায়গায় যায়। চাঁদাবাজির মাস্টার। গোপালগঞ্জে যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটাল। এত মানুষ মারল। এমনকি, সেনার যে আচরণ সবটাই ধরা পড়েছে।’
শেখ হাসিনার এই বার্তা ১৯৭১ সালের শেখ মুজিবুর রহমানের সেই বার্তার মতো বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক মহলের একাংশ। মুজিবের বার্তার পরেই মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলাদেশ তৈরি হয়। হার স্বীকার করে নিতে হয় পাকিস্তানকে।