
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করল সংসদের বিদেশ বিষয়ক স্থায়ী কমিটি। কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরের নেতৃত্বাধীন এই কমিটির মতে, ১৯৭১ সালের পর এই পরিস্থিতিই ভারতের সামনে সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ। সংসদে পেশ করা সাম্প্রতিক রিপোর্টে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদল ভারতের আঞ্চলিক স্বার্থের পক্ষে অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে উঠছে।
শেখ হাসিনার পতন ও বদলে যাওয়া সমীকরণ
গত বছর ছাত্র আন্দোলনের জেরে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুত বদলেছে। সেই সময়েই ভারত-বিরোধী ভাষা ও মনোভাব প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে বলে রিপোর্টে উল্লেখ। কমিটির পর্যবেক্ষণ, বাংলাদেশে প্রজন্মগত দূরত্ব বাড়ছে, জাতীয়তাবাদের নতুন ধারা তৈরি হচ্ছে এবং সেই সঙ্গে ভারতের প্রভাবও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।
‘স্ট্র্যাটেজিক নাইটমেয়ার’ বলেই আশঙ্কা
সংসদীয় কমিটির ভাষায়, বর্তমান পরিস্থিতি ১৯৭১-এর মতো সরাসরি মানবিক সঙ্কট না হলেও, অনেক বেশি সূক্ষ্ম ও দীর্ঘমেয়াদি ‘স্ট্র্যাটেজিক নাইটমেয়ার’। রিপোর্টে বলা হয়েছে—আওয়ামি লিগের রাজনৈতিক শক্তি কমছে, যুব নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদ মাথা তুলছে, ইসলামপন্থী শক্তির প্রত্যাবর্তন ঘটছে এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশে চীন ও পাকিস্তানের প্রভাব বাড়ছে।
একটি বেসরকারি সাক্ষ্য উদ্ধৃত করে কমিটি জানিয়েছে, এই সব পরিবর্তন মিলেই বাংলাদেশকে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
ভারতের অবস্থান কী?
রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ভারতের বিদেশসচিব সংসদীয় কমিটিকে আশ্বস্ত করেছেন যে ভারত কোনওভাবেই প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে না। বিদেশমন্ত্রকের বক্তব্য—বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন সত্ত্বেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টা চলছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে এবং বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান জানানো হচ্ছে।
আঞ্চলিক কূটনীতিতে বড় চ্যালেঞ্জ
সব মিলিয়ে, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভারতের পূর্ব সীমান্ত ও আঞ্চলিক কৌশলের জন্য বড় পরীক্ষা বলেই মনে করছে সংসদীয় কমিটি। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে এই পরিবর্তনের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। এমনই ইঙ্গিত মিলছে রিপোর্টে।