বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায় সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষের স্মৃতি জড়িত বাড়িটি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করেছে মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রকে এই বিষয়ে নজর দেওয়ার আবেদনও করেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত নরেন্দ্র মোদী সরকারও। সত্যজিৎ রায়ের তিন প্রজন্মের সঙ্গে সম্পর্কিত বাড়িটি ভেঙে ফেলার ঘটনায় ভারত সরকার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সেইসঙ্গে মঙ্গলবার ভারত বাংলাদেশকে ভবনটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন জানিয়েছে।
এই বাড়িটি বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরে অবস্থিত। ময়মনসিংহে হরিকিশোর রায় সড়কে ওই বাড়ির সঙ্গে সত্যজিৎ রায় এবং উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর স্মৃতি জড়িত। হরিকিশোর রায় চৌধুরী বাংলাদেশের মসূয়ার জমিদার ছিলেন। তিনি সত্যজিৎ রায়ের দাদু ও সুকুমার রায়ের বাবা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর পালক পিতা ছিলেন। সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোরের বাল্যকাল ও কিশোর বেলা এই বাড়িতেই কেটেছে। বর্তমানে সম্পত্তিটি বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রক (MEA) বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়েছে যে বাড়িটি বাঙালি সংস্কৃতির নবজাগরণের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি ঐতিহাসিক স্থান। বাংলার সাংস্কৃতিক জাগরণের প্রতীক হিসেবে ভবনটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে এটি ভেঙে ফেলার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হোক এবং সাহিত্য জাদুঘর ও ভারত-বাংলাদেশের অভিন্ন সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে এর সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের বিকল্পগুলো খুঁজে দেখা উচিত হবে। ভারত সরকার এই উদ্দেশ্যে সহযোগিতার হাত বাড়াতে ইচ্ছুক বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভারত সরকার একটি মিউজিয়াম তৈরিতে সাহায্য করতে প্রস্তুত
বিদেশ মন্ত্রক বাংলাদেশ সরকারকে আরও জানিয়েছে যে যদি তারা এই ভবনটি পুনরুদ্ধারের কথা বিবেচনা করে, তাহলে ভারত সরকার সহায়তা প্রদান করতে প্রস্তুত। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন যে স্মৃতিতে ভরা এমন একটি স্থান ধ্বংস করা হৃদয়বিদারক। তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের সরকারকে এই ঐতিহাসিক স্থানটি সংরক্ষণের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং রায় পরিবারকে বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পথিকৃৎ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৯ সাল থেকে বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাডেমি বাড়িটি ব্যবহার করত। তবে গত দশ বছর ধরে ওই বাড়িটি জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকায় সেখানে আর অ্যাকাডেমির কাজ চালানো যায় না। নতুন করে অ্যাকাডেমির কাজ শুরু করার জন্য এই শতাব্দীপ্রাচীন বাড়িটি একেবারে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাড়িটির একটি বড় অংশই ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেই জায়গায় নতুন ভবন তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বাড়িটি ভেঙে শিশু অ্যাকাডেমি তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে
বাড়িটি জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল এবং প্রায় এক দশক ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। আগে এটিতে ময়মনসিংহ শিশু অ্যাকাডেমি ছিল কিন্তু পরে তা পরিত্যক্ত হয়ে যায়। একজন বাংলাদেশি কর্মকর্তা স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন যে নতুন পরিকল্পনায় শিশু অ্যাকাডেমির কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার জন্য ওই স্থানে একটি নতুন ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর জন্য, পুরানো ভবনটি ভেঙে ফেলতে হবে।