বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বড় পদক্ষেপ সেদেশের পুলিশের। শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের জন্য এবার ইন্টারপোলকে চিঠি দিল বাংলাদেশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (NCB)। শেখ হাসিনাসহ মোট ১২ জনের নামে 'রেড কর্নার নোটিস' জারির অনুরোধ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা গত বছর ৫ অগাস্ট থেকে ভারতেই রয়েছেন। রাজধানী ঢাকায় উত্তাল ছাত্র আন্দোলনের পরে তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। সেই আন্দোলনের জেরে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লিগের ১৬ বছরের মেয়াদকালের অবসান ঘটে।
পুলিশ কী বলছে?
‘দ্য ডেইলি স্টার’ জানিয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশের এনসিবি আদালত, সরকারি কৌঁসুলি বা তদন্ত সংস্থার অনুরোধের ভিত্তিতে রেড কর্নার নোটিসের আবেদন করে।
রেড কর্নার নোটিস ইন্টারপোলের এমন এক ধরনের নোটিশ, যার মাধ্যমে কোনও ব্যক্তিকে সাময়িকভাবে গ্রেফতার করা যায়। এরপর তাকে প্রত্যর্পণ বা অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়। ইন্টারপোল বিদেশে পলাতক আসামিদের খুঁজে পেতে সাহায্য করে এবং প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষকে সেই তথ্য জানিয়ে দেয়।
এর আগেও জারি হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা
বাংলাদেশে ৮ অগাস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়। সেই সরকারে মুখ্য উপদেষ্টার পদে আসীন হন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনুস। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT) শেখ হাসিনা সহ প্রাক্তন মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সেনা ও বেসামরিক কর্তাদের বিরুদ্ধে 'মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা'র অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।
গত বছরের নভেম্বরে ICT-র প্রধান কৌঁসুলির দপ্তর পুলিশ সদর দপ্তরকে ইন্টারপোলের সাহায্য চেয়ে অনুরোধ করে শেখ হাসিনা ও অন্য পলাতকদের ধরার জন্য। এরপর ২১ জানুয়ারি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা করে, তারা শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাবে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আশ্রয়ও নেওয়া হবে।
রেড কর্নার নোটিস কী?
রেড কর্নার নোটিস কোনও সরাসরি গ্রেফতারি পরোয়ানা নয়। এটি ইন্টারপোল সদস্য দেশগুলির কাছে একটি অনুরোধ— ওই ব্যক্তি যেন ধরা পড়লে সাময়িকভাবে গ্রেফতার করা হয়, যাতে তাকে প্রত্যর্পণের জন্য প্রস্তুত রাখা যায়। কিন্তু এই নোটিস অনুযায়ী গ্রেফতার বাধ্যতামূলক নয়। এটা পুরোপুরি সংশ্লিষ্ট দেশের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে।
এখন কী হতে পারে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইন্টারপোল যদি রেড কর্নার নোটিস জারি করেও দেয়, তাহলেও শেখ হাসিনাকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া সম্পূর্ণভাবে ভারতের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে। ইন্টারপোলের নোটিস মানলেই গ্রেফতার করতে হবে— এমন কোনও বাধ্যবাধকতা ভারতের নেই। ভারত প্রথমে দেখবে, বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের কোনও প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে কি না। এছাড়া তারা বিবেচনা করবে, অভিযোগগুলি রাজনৈতিক কি না। অভিযোগ রাজনৈতিক হলে, ভারত শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দিতে অস্বীকার করতে পারে। তাছাড়া ভারতের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক স্বার্থও এখানে বড় ভূমিকা নেবে। ভারত যদি মনে করে, শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করলে রাজনৈতিক নির্যাতন হতে পারে, তাহলে তারা এই অনুরোধ মানবে না।
এই ঘটনাকে ঘিরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক ও আস্থা কতটা প্রভাবিত হবে, তা এখন সময়ই বলবে।