Advertisement

Bangladesh Islamist: লালনের বাংলাদেশে কট্টরপন্থীদের তাণ্ডব, বাউল, ফকিরদের উপর অকথ্য অত্যাচার, ভয়াবহ VIDEO, কী পরিস্থিতি?

ইতিমধ্যেই আব্দুল সরকার নামে এক বাউল শিল্পীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ভাবাবেগে আঘাতের প্রতিবাদে এবার পথে নামছে মানুষ। ইতিমধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল পড়ুয়া, অধ্যাপক সাংস্কৃতিক আঘাতের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন।

বাংলাদেশে বাউল, ফকিরদের উপর হামলাবাংলাদেশে বাউল, ফকিরদের উপর হামলা
Aajtak Bangla
  • ঢাকা,
  • 25 Nov 2025,
  • अपडेटेड 10:16 AM IST
  • দুশোর বেশি মাজার ভেঙে ফেলা হয়েছে, কবর থেকে দেহ তুলে পুড়িয়ে দিচ্ছে
  • ইউনূস প্রশাসন কট্টরপন্থীদের পাশে দাঁড়াচ্ছে নীরব থেকে
  • বাউল শিল্পী আব্দুল সরকারের গ্রেফতার

হিন্দুদের উপর অত্যাচার তো চলছেই। তার সঙ্গে এখন বাউল, ফকিরদের উপরেও অকথ্য নির্যাতন শুরু হয়েছে। বেধড়ক মারধর, জুতোপেটা, গ্রেফতার, অত্যাচার চরমে পৌঁছেছে নিরীহ বাউলশিল্পীদের উপরে। মহম্মদ ইউনূসের বাংলাদেশে আপনাকে স্বাগত! যে বাংলাদেশ লালন ফকিরের জন্মস্থান, সেই বাংলাদেশে আজ বাউল, ফকিরদের উপর নির্যাতন চলছে। ইসলামের কট্টরপন্থীরা অকথ্য অত্যাচার শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের বিখ্যাত সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন, যাতে দেখা যাচ্ছে, কয়েকজন কট্টরপন্থী দুষ্কৃতী বাউল, ফকিরদের মারছে। 

ইতিমধ্যেই আব্দুল সরকার নামে এক বাউল শিল্পীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ভাবাবেগে আঘাতের প্রতিবাদে এবার পথে নামছে মানুষ। ইতিমধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল পড়ুয়া, অধ্যাপক সাংস্কৃতিক আঘাতের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন। বস্তুত, শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও হাসিনার বাংলাদেশে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকেই বাউল, ফকিরদের উপর অকথ্য অত্যাচার চলছে। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে জামাত ই ইসলামের দাপট। কট্টরপন্থী ইসলাম মেনে তারা স্কুল, কলেজে গানবাজনা শেখানো বন্ধ করার চেষ্টা করছে। জামাতদের চাপে ইউনূস প্রশাসনও গানবাজনা বন্ধ করতে উঠেপড়ে লেগেছে। শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। 

দুশোর বেশি মাজার ভেঙে ফেলা হয়েছে, কবর থেকে দেহ তুলে পুড়িয়ে দিচ্ছে

বাংলাদেশের ২৫০ জন বিশিষ্ট নাগরিক ও বুদ্ধিজীবী একটি বিবৃতিতে সই করে আন্দোলন তীব্র করছেন ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সেই বিবৃতিতে লেখা, '২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই ধর্মীয় কট্টরপন্থীদের উপদ্রব বেড়েছে বাংলাদেশে। একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী, নিজেদের ইসলামের রক্ষাকর্তা বলে দাবি করছে। গোটা দেশজুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে। দমবন্ধকর পরিস্থিতি।'

বিশিষ্ট নাগরিকদের একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০০-র বেশি মাজার ভেঙে ফেলা, অসংখ্য মানুষকে মুর্তাদ, কাফের, শাতিম বলে ঘোষণা করা, কবর থেকে দেহ তুলে পুড়িয়ে দেওয়া, রাস্তায় বাউল, ফকিরদের চুল জোর করে কেটে দেওয়া, মহিলাদের চলাফেরা ও পোশাক নিয়ে হেনস্থা, নাচ, গান, থিয়েটার, খেলা, মেলা, সব ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ভেঙে দেওয়া, এই সব দেখে মনে হচ্ছে ভিন্ন মতের ও ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষদের সমাজ থেকে সরিয়ে দেওয়াই এদের উদ্দেশ্য।

Advertisement

ইউনূস প্রশাসন কট্টরপন্থীদের পাশে দাঁড়াচ্ছে নীরব থেকে

এই বিবৃতিতে সই করেছেন হাসিনা সরকারের কড়া সমালোচক বহু শিক্ষাবিদ,যেমন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মহম্মদ, গবেষক সলিমুল্লাহ খান প্রমুখ। তাঁদের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই হিংসা ও সন্ত্রাস ঠেকাতে কার্যকর কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বরং শুরু থেকেই নীরব থাকা, ঘটনাকে সাধারণ ‘প্রেসার গ্রুপ’-এর কাজ বলে ছোট করে দেখানো, এমনকী অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদেরই আটক করা বা তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া, এসবের মধ্যে দিয়ে প্রশাসন পরোক্ষভাবে এই সন্ত্রাসকে বাড়িয়ে তুলছে।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (ASK)-ও বাউল শিল্পী আব্দুল সরকারের গ্রেফতারের পর তাঁর অনুগামীদের উপর হামলা প্রসঙ্গে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বার্লিন ভিত্তিক স্বচ্ছতা পর্যবেক্ষক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-এর বাংলাদেশ শাখা বলেছে, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি দেখে মনে হচ্ছে দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতির উপর শত্রুতা বাড়ছে। ঢাকায় এক প্রতিবাদ সভায় কবি ও সমাজকর্মী ফারহাদ মজহার সতর্ক করে বলেন, বাংলাদেশে এক নতুন ধরনের ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ মাথা তুলছে। তাঁর কথায়, 'ওঁকে (আবুল সরকার) গ্রেফতার মানে আমাকে গ্রেফতার। আমি এটা মানতে পারি না।' ফারহাদ মজহার হলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসের উপদেষ্টা পরিষদের এক সদস্যের স্বামী।

বাউল শিল্পী আব্দুল সরকারের গ্রেফতার

পশ্চিম মাদারীপুরে এক সঙ্গীতানুষ্ঠান থেকে জনপ্রিয় বাউল শিল্পী আব্দুল সরকারকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। অভিযোগ, তিনি নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে দাঙ্গা উসকে দিয়েছেন এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছেন। সেদিনই মানিকগঞ্জের একটি আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠায়। এর দু’দিন পর, তাওহিদি জনতা নামে এক ইসলামপন্থী সংগঠনের সদস্যরা ঢাকার উত্তর প্রান্তে সরকারের মুক্তির দাবিতে হওয়া একটি মিছিল চলাকালীন সহশিল্পীদের উপর হামলা চালায়। এতে চারজন গুরুতর জখম হন।

বাউল সংস্কৃতি বনাম কট্টরপন্থী

সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞদের মতে, লালনের ধারার বাউলরা এই অঞ্চলে বহু শতাব্দী ধরে উদার, মিলনধর্মী সংস্কৃতি প্রচার করে এসেছেন। অথচ আজকের এই ‘তাওহিদি জনতা’ গোষ্ঠী তুলনায় অনেক নতুন, এদের আদর্শ মূলত কট্টর, কঠোর এবং অসহিষ্ণু। এই ঘটনার প্রতিবাদে বামপন্থী ছাত্র-যুব সংগঠনগুলি ঢাকায় ও জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিল করেছে। এ ছাড়া বাউল শিল্পী ও কলাকুশলীরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে সরকারের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।

ক্রমাগত সংস্কৃতির উপর আঘাত

গত এক বছরে তাওহিদি জনতার মদতে বিভিন্ন জায়গায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মঞ্চ ভেঙে দেওয়া হয়েছে, বহু সুফি সাধকের মাজার ভাঙা হয়েছে, আর হিন্দু সহ সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ বেড়েছে। আইনজীবী সারা হোসেন এক সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, সরকারের অবস্থান এখানে খুবই সমস্যাজনক। যারা অন্যদের উপর হামলা করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এত সহজে এই ধরনের মামলাগুলি কেন গ্রহণ করা হচ্ছে? তিনি আরও বলেন, গত এক বছরে সরকার বারবার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা করেছে, কিন্তু বাস্তবে তা কতটা রক্ষা করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

সরকারের প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন

অন্তর্বর্তী সরকারের সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা মোস্তাফা সরয়ার ফারুকির বক্তব্য, স্বরাষ্ট্র দফতর এই অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও সংবেদনশীল বিষয়টি যথাসম্ভব দায়িত্ব নিয়ে সামলানোর চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে হাসিনা সরকারের উপরেও দায় ঠেলে দিলেন। বলছেন,  'বাউলদের উপর অত্যাচার নতুন কিছু নয়, আগের বহু সরকার, এমনকী ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লিগের আমলেও বহুবার এ ধরনের হামলা হয়েছে।'

Advertisement
Read more!
Advertisement
Advertisement