ল্যাজে-গোবরে অবস্থা মুহাম্মদ ইউনূসের। একদিকে বাংলাদেশের সেনা, অন্যদিকে BNP, জামাতের মতো দলগুলির পক্ষ থেকে চাপ। 'পদত্যাগ নাটক' ধোপে টেকেনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা প্রধানের। শনিবার রাত থেকে পরপর ম্যারাথন বৈঠক করেন তিনি। তবে তা সত্ত্বেও নির্বাচনের চাপ এড়াতে পারলেন না ইউনূস।
BNP-র পক্ষ থেকে মুহাম্মদ ইউনূসকে ডিসেম্বরে নির্বাচন করানোর সুপারিশ করা হয়েছে। পাশপাশি বিকর্কে জড়িত উপদেষ্টাদের সরিয়ে ফেলার কথাও বলা হয়েছে। দলের নীতি নির্ধারক সর্বোচ্চ স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য খান্দেকর মোশারফ হোসেন বলেন, 'নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করার আবেদন করা হয়েছে মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে। এছাড়াও দাবি জানানো হয়েছে, বিতর্কে জড়িত উপদেষ্টাদের সরিয়ে নতুন করে উপদেষ্টা সমিতি গঠন করার।'
BNP নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, বৈঠকে তাদের দলের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং দুই ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলমকে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, BNP কখনওই ইউনূসের পদত্যাগ চায়নি। বরং প্রথম দিন থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারকে সমস্ত রকম সহযোগিতা তারা করে আসছিল। এদিকে, প্রাক্তন মন্ত্রী এবং BNP নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র চলছে যাতে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হয় এবং নাগরিকদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যায়।
জামাতের সঙ্গেও বৈঠক করেন ইউনূস। সেখানেও তাঁকে নির্বাচনের জন্যই সময় নির্ধারিত করতে বলা হয়। জামাত চিফ শফিকুর রহমান বলেন, 'হয় আগামী বছর ফেব্রুয়ারি আর না হয় রমজান শেষ হওয়ার পর নির্বাচন করাতে হবে। দু'টি স্পষ্ট রোডম্যাপ জানাতে বলেছি আমরা। এক, উপদেষ্টা পরিকাঠামোর সংস্কার এবং দুই, নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা।'
একইসঙ্গে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া জরুরি।
গত অগাস্টে শেখ হাসিনার গা ঢাকা দিয়ে দিল্লি চলে আসার পর অস্থায়ী সরকারের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব নেন ইউনূস। ৯ মাসের মধ্যেই অভিভাবকের উপর ভরসা হারাচ্ছে দেশ। ইউনূস একাধিক বার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বর থেকে জুন মাসের মধ্যে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। তবে দেশের যা পরিস্থিতি, তাতে নির্বাচন হলে তা আদৌ অবাধে এবং সুষ্ঠু ভাবে হবে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত নন ইউনূস। সূত্রের খবর, ভোটে ব্যালট ছিনতাই আটকানো যাবে কি না, পুলিশ আদৌ ব্যালট ছিনতাই আটকাতে পারবে কি না, ইউনূস নিজেই তা নিয়ে সন্দিহান। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনে ব্যর্থতা, কাঙ্ক্ষিত সংস্কারে ব্যর্থতার দায় তিনি নিতে চান না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
রাজনৈতিক দলগুলির এখন বক্তব্য, ন্যূনতম সংস্কার করেই অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের আয়োজন করুক। বাকি সংস্কারের কাজ নির্বাচিত সরকারের জন্য রেখে দেওয়া হোক। রাজনৈতিক দলগুলির চাপে এখন 'ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি' দশা ইউনূসের।