নিউটাউন এলাকার সঞ্জিভা গার্ডেন থেকে বাংলাদেশের সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনারের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ সন্দেহভাজন ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'গ্রেপ্তার ৩ জন পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। তাদের জিজ্ঞেসাবাদের পাশাপাশি আরও কয়েকজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। মরদেহ কোথায় আছে সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নই। তবে পুরো ঘটনা সম্পর্কে তদারকি চলছে।'
এই মৃত্যুর সঙ্গে ভারতীয় কেউ জড়িত নয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, 'ভারতীয় সরকার আমাদের সহযোগিতা করছে। ভারতীয় পুলিশ নিশ্চিত করেছে, তাঁকে (আনোয়ারুল আজিম) পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে।'
বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, 'সাংসদের হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত দুঃখজনক ও মর্মান্তিক। কলকাতা পুলিশ যে ফ্ল্যাটে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছে, সেখানে কোনও লাশ খুঁজে পায়নি। তবে হত্যাকাণ্ডের পর ক'য়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কীভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে সে ব্যাপারে তদন্ত চলছে।'
উল্লেখ্য, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম ১২ মে চিকিৎসার জন্য দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে আসেন। ১৬ মে থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি। আনোয়ারুল আজিমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে ১৮ মে থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন সাংসদের বন্ধু ও বরাহনগরের বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাস।
পুলিশ সূত্রে খবর, ১২ মে সন্ধে ৭টার দিকে আনোয়ারুল কলকাতায় তাঁর পূর্বপরিচিত বন্ধুসম্পর্কীয় গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। গোপালের সঙ্গে তাঁর ২৫ বছরের পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। ১৩ মে বেলা ২টোর দিকে আনোয়ারুল চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা বলে গোপাল বিশ্বাসের বাড়ি থেকে বের হন। তখন গোপালকে বলে যান, তিনি সন্ধেয় ফিরে আসবেন। এরপর আর না ফেরার কারণে ১৮ মে কলকাতার বরাহনগর থানায় গোপাল বিশ্বাস একটি ডায়েরি করেন।
গোপাল বিশ্বাস জিডিতে উল্লেখ করেন, ‘আনোয়ারুল আজিমের সঙ্গে তাঁর ২৫ বছর ধরে পারিবারিক সম্পর্ক। ১২ মে সন্ধে ৭টার দিকে আনোয়ারুল আজিম মণ্ডলপাড়া লেনে তাঁর (গোপাল বিশ্বাস) বাড়িতে আসেন। তিনি কলকাতায় আসেন ডাক্তার দেখাতে। পরদিন (১৩ মে) বেলা পৌনে ২টোর দিকে ডাক্তার দেখানোর জন্য গোপাল বিশ্বাসের বাড়ি থেকে বের হন আনোয়ারুল আজিম। যাওয়ার সময় তিনি বলে যান, দুপুরে খাবেন না। সন্ধেয় ফিরে আসবেন। পরে তিনি কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে এসে নিজেই গাড়ি ডেকে চলে যান।’
অন্যদিকে বাংলাদেশ পুলিশ সূত্রে খবর, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এটি পারিবারিক, আর্থিক, নাকি এলাকার কোনো দুর্বৃত্তকে দমন করার জন্য হয়েছে, তা আমরা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। জানা গেছে, মোট ছজন এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। তাদের সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। এমপিকে হত্যার পর পাঁচজন দেশে ফিরে আসে এবং একজন এখনও এদেশেই রয়েছে। তবে বাংলাদেশে ফিরে আসা পাঁচজনের মধ্যে একজন অন্য দেশে পাড়ি দিয়েছে বলেও জানা গেছে। আর ভারতে অবস্থান করা ব্যক্তিকে আটক করতে চেষ্টা করছে ভারতের পুলিশ।