বাংলাদেশে বর্তমানে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রয়েছে, তার প্রধান উপদেষ্টা হলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মহম্মদ ইউনূস। একসময় গ্রামীণ ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিশ্বের প্রশংসা কুড়নো ইউনূস এখন একেবারে ঘোর রাজনৈতিক সঙ্কটের কেন্দ্রবিন্দুতে। একদিকে দেশজুড়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েন, অন্যদিকে তাঁর পদত্যাগ নিয়ে জল্পনা, সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে তিনি যেন ‘ল্যাজে গোবরে’ অবস্থায়।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের প্রেস সচিব সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ইউনূস ৩০ জুনের পর একদিনও ক্ষমতায় থাকবেন না। অর্থাৎ, তাঁর সময় ফুরিয়ে এসেছে। সেই সময়সীমার মধ্যেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ করতে হবে—এটাও স্পষ্ট। কিন্তু আসল সমস্যা এখানেই। ইউনূস যখন নিজেই ঘোষণা করছেন, তিনি চলে যাবেন, তখন প্রশ্ন উঠছে—এই সরকার আদৌ কী নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে?
একদা নোবেলজয়ী, আজ রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা
ইউনূসকে ঘিরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি দিনদিন আরও জটিল হয়ে উঠছে। অতীতে তিনি বিশ্বব্যাপী এক জনপ্রিয় মুখ ছিলেন। শান্তি প্রতিষ্ঠা, মাইক্রোক্রেডিট মডেল ইত্যাদির জন্য প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। কিন্তু এখন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি একেবারে বিপাকে। সরকারের তরফে আওয়ামী লিগের কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞাকে কেন্দ্র করে দেশে-বিদেশে প্রবল সমালোচনা শুরু হয়েছে। সেই দায় ঘাড়ে এসে পড়েছে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের ওপর। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন, দেশ এখন ‘বড় যুদ্ধাবস্থার’ মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
রাজনৈতিক দলগুলির দাবি, ‘ইস্তফা দেবেন না’
একাধিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকে ইউনূস জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন করাতে ব্যর্থ হলে নিজেকে অপরাধী ভাববেন। কিন্তু অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতাই তাঁকে পদত্যাগ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য—এখন ইউনূস পদত্যাগ করলে আরও সমস্যা বাড়বে। কিন্তু এটা পরিষ্কার, ইউনূস আর নিজের সিদ্ধান্তে স্থির নন। একবার বলছেন থাকবেন, আবার বলছেন যাবেন। এটাই তাঁর ‘ল্যাজে গোবরে’ দশার মূল চিহ্ন। একজন অভিজ্ঞ প্রশাসকের এমন দ্বিধা, এমন অস্থিরতা বাংলাদেশের মতো একটি সংবেদনশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও ভয়ঙ্কর করে তুলছে।
তারেক রহমানের হুঁশিয়ারি ও রোডম্যাপ দাবি
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চাই। তিনি সরকারের প্রতি অভিযোগ এনেছেন, সরকার জনগণের প্রতি জবাবদিহিমূলক নয়। অর্থনৈতিক অস্থিরতা, বেকারত্ব ও মূল্যবৃদ্ধির মতো সমস্যাগুলিকে সামনে এনে বলেছেন, এই সরকারের পরিকল্পনা অস্বচ্ছ ও অকার্যকর। তিনি আরও বলেন, 'সরকারের মান-অভিমান দিয়ে রাষ্ট্র চলে না। জনগণের দাবি মানতে সরকার বাধ্য।' এই পরিস্থিতিতে তারেক রহমান সহ বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃত্ব একটি নির্দিষ্ট রোডম্যাপ দাবি করেছে, যেখানে থাকবে নির্বাচন, প্রশাসনিক সংস্কার ও রাজনৈতিক ঐকমত্য।
কোথায় যাচ্ছেন ইউনূস?
এই মুহূর্তে ইউনূসের অবস্থান যেন একটা মাঝপথে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের মতো, না সে সামনে যাচ্ছে, না পিছনে ফিরছে। তিনি নিজেই বলেছেন, 'দেশকে যুদ্ধ পরিস্থিতি থেকে টেনে আনতে হবে'। কিন্তু তাঁর হাতে যে সময় খুবই কম, সে কথাও বলছেন। প্রেস সচিবের ঘোষণার পর এটা স্পষ্ট, ৩০ জুনের পর ইউনূস আর ক্ষমতায় থাকবেন না। প্রশ্ন হচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে কী তিনি একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারবেন?