
বাংলাদেশে সেই জুলাই বিপ্লবের গ্যাস বেলুন ফেটে গিয়েছে! নির্বাচনের ঠিক আগে এই বিপ্লবের নেতৃত্বে থাকা ছাত্র সংগঠন ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (NCP) থেকে পদত্যাগের লাইন পড়ে গিয়েছে। পদত্যাগীদের তালিকায় রয়েছেন মাহফুজ আলম। তিনি জুলাই আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আপাতত নিজের দল থেকেই দূরে সরে গেলেন তিনি। আসলে NCP-র সঙ্গে জামাতের জোট না পসন্দ তাঁর। ফলত ফের ওলোট-পালোট হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে বহু প্রতীক্ষিত নির্বাচন। সেই আবহে NCP-র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জামাতের সঙ্গে জোটের ঘোষণা করেছেন। একটি ফেসবুক পোস্টে এরপরই মাহফুজ আলম লেখেন, 'আমি এই NCP-র অংশ হতে অস্বীকার করছি।' এরপর ৩০ জন সিনিয়র NCP নেতাও এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেন। একটি স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন বিক্ষুব্ধরা। পাশাপাশি, দুই বিশিষ্ট নেতা দল থেকে পদত্যাগও করেন।
মাহফুজ আলম আরও বলেন, 'বর্তমান পরিস্থিতিতে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া আমার সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা , স্নেহ এবং বন্ধুত্ব কখনওই শেষ হবে না। কিন্তু এই NCP-র অংশ হতে পারব না আমি। জামাত-NCP জোট থেকে আমি কোনও প্রস্তাব পেয়েছি, তেমনটা নয়। তবে আমার কাছে ঢাকার যে কোনও আসন থেকে জামাত-NCP জোটের প্রার্থী হওয়ার চেয়ে পুরনো অবস্থান ধরে রাখা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।'
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস গত বছর আমেরিকায় বিল ক্লিনটনের সঙ্গে মাহফুজ আলমের পরিচয় করিয়ে দেন। স্পষ্ট ভাবে তাঁকে ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের নেপথ্য কারিগত হিসেবেও বর্ণনা করেন। এই মাহফুজ আলমকে বাংলাদেশে NCP-র গুরু হিসেবেই দেখা হয়।
নির্বাচনের আগে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের জন্য NCP আহ্বাক নাহিদ ইসলাম জামাতের নেতৃত্বাধীন জোটে যোগদানের ঘোষণা করার কয়েক ঘণ্টা পরেই মাহফুজ আলমের পোস্ট ভাইরাল হয়। তবে ধারাবাহিক পদত্যাগের পর নাহিদ ইসলাম বলেন, 'এই পদক্ষেপের অর্থ জামাতের কোনও আদর্শকে মানিয়ে নেওয়া নয়।' তবে তাঁর কথায় আমল দিচ্ছেন না বিক্ষুব্ধরা।
রবিবার রাতে NCP অফিসে এক জরুরি সাংবাদিক বৈঠকে নাহিদ ইসলাম বলেন, 'বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে NCP-র পক্ষে একাধিস নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সম্ভব নয়। সেজন্য আমরা ৮টি সমমনস্ক দলের সঙ্গে জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।' NCP-র আহ্বায়ক আরও বলেন, 'এটি কোনও আদর্শের জোট নয়। এটি একটি নির্বাচনী চুক্তি। NCP তার লক্ষ্য এবং নীতি মেনে চলবে। এই মুহূর্তে আমাদের মনোযোগ নির্বাচনী সহযোগিতার উপর রয়েছে।' তাঁর আরও বক্তব্য, 'জামাতের সঙ্গে NCP-র জোট দলের কার্যনির্বাহী পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে চূড়ান্ত হয়েছে। জামাতের সঙ্গে নির্বাচনী চুক্তি নিয়ে NCP-র মধ্যে কোনও বিভাজন নেই। কেন্দ্রীয় কমিটি তৃণমূল স্তরে সংগঠন এবং সহযোগী সংগঠনগুলির জোটকে সমর্থন করে। ভিন্নতম পোষণকারীদের প্রস্তাবের আপত্তি বা ভেটো দেওয়ার অধিকার রয়েছে।'
এদিকে, এই জোটের বিরোধিতা করা নেতাদের যুক্তি, জামাতের একটি বিতর্কিত রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে। এই NCP নেতারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে জামাতের ভূমিকা এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে গণহত্যা ও অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে ধরেন। এটিকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিকচেতনা এবং NCP-র মূল মূল্যবোধের সঙ্গে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।