বাংলাদেশে এবার স্কুলের পাঠ্য়ক্রমেই পরিবর্তন হতে চলেছে। আসন শিক্ষাবর্ষ থেকে অতিরিক্ত ঐতিহাসিক তথ্য বা কোনও ব্যক্তির অপ্রয়োজনীয় প্রশংসা মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সরকারি কর্তারা বলেছেন যে পাঠ্যক্রমের বিভিন্ন শ্রেণির পুরনো পাঠ্যপুস্তক পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের জন্য সংশোধন করা হচ্ছে। যখন প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির পাঠ্যক্রম অপরিবর্তিত থাকবে। সরকার বিভিন্ন গ্রেডে ৩৩টি পাঠ্যপুস্তক সংশোধনের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে। তিন থেকে পাঁচজন বিষয় ভিত্তিক বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিটি কমিটি এনসিটিবি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা ও সংশোধন করবে।
এই বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলা, অঙ্ক, আইসিটি, বাংলাদেশ এবং গ্লোবাল স্টাডিজ, নাগরিক বিজ্ঞান এবং নাগরিকত্ব, বাংলাদেশের ইতিহাস এবং বিশ্ব সভ্যতা বিষয়গুলিতে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সমস্ত পাঠ্যপুস্তকের কভার পেজেও পরিবর্তন করা হবে। এনসিটিবি সদস্য (পাঠ্যক্রম) অধ্যাপক রবিউল কবির চৌধুরী বলেছেন, একটি দল ইতিমধ্যেই সংশোধন প্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং এই মাসের শেষের দিকে কাজটি শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কমিটির এক সদস্য বলেছেন, 'বিগত সরকারের আমলে লেখা অনেক পাঠ্যপুস্তকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্ণনা এবং বক্তৃতা সহ অন্যান্য অতিরঞ্জিত তথ্য রয়েছে। আমাদের এই বিষয়বস্তু অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর অর্থ হল ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য পাঠ্যপুস্তকে থাকবে এমন সম্ভাবনা কম।' অপর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, 'হাসিনাকে বীরের আলোকে তুলে ধরা হয়েছে এমন বিষয়বস্তু, যা পাঠ্যপুস্তকের জন্য অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করা হয়, সেগুলি বাদ দেওয়া হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জিয়াউর রহমান উভয়কেই দেশের জন্য তাঁদের অবদানের জন্য সম্মান জানানো হবে এবং পাঠ্যপুস্তকে আর কোনও মিথ্যা বা বিকৃত ইতিহাস থাকবে না।' তিনি আরও বলেন, 'জিয়াউর রহমানের অবদানকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ইতিমধ্যে একটি প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আগে বাদ দেওয়া হয়েছিল।' রিভিশনের সঙ্গে জড়িত একজন লেখক ও কর্মী রাখাল রাহা বলেছেন, 'আমাদের কাছে বড় পরিবর্তন করার জন্য খুব কম সময় আছে, কিন্তু সরকার আমাদের নির্দেশ দিয়েছে কোনও ব্যক্তির কোনও মহিমান্বিত বা অতিরঞ্জিত তথ্য সংশোধন করার জন্য।'
এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম রিয়াজুল হাসান বলেন, 'সব পাঠ্যপুস্তকের কভারে অতিরঞ্জিত চিত্র তুলে দেওয়া হবে। পরিবর্তে, কভারগুলিতে জাতীয় মূল্যবোধ বা জরুরি পরিষেবাগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়বস্তু থাকতে পারে। ঐতিহাসিক তথ্যের ভুল যাতে না হয় তা নিশ্চিত করতে ও রাজনৈতিকভাবে বিতর্ক থেকে দূরে থাকতে সামাজিক, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সংবেদনশীল যে কোনও বিষয়বস্তু এড়াতে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।'
ছাত্র আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানের কোনও বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি না জানতে চাইলে অধ্যাপক রিয়াজুল বলেন, সীমিত সময়ের কারণে বর্তমান সংশোধনীতে এ ধরনের অন্তর্ভুক্তি সম্ভব নয়। তবে আমরা পরের বার এটি নিয়ে কাজ করব। আপাতত আমরা জরুরি কাজগুলোর ওপর জোর দিচ্ছি। এগুলোর সমাধান হয়ে গেলে আমরা নতুন পাঠ্যক্রমের উন্নয়ন বিবেচনা করব।'