করোনাকালে প্রথম বিদেশ সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রায় ১৫ মাস পর বিদেশ সফরে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাও আবার প্রতিবেশী বাংলাদেশ। সেখানেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গান্ধী শান্তি পুরস্কার প্রদান করার সময় একেবারে ভিন্ন মেজাজে পাওয়া গেল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। দেশে যতই তিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নীতিগুলির বিরুদ্ধে তোপ দেগে থাকুন না কেন বাংলাদেশের মাটিতে প্রশাংসাই ঝড়ে পড়লো। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনে ইন্দিরা অবদান ভোলা সম্ভব নয়, ঢাকার মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলতে শোনা গেল মোদীকে। জানালেন একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় নীতিও মনেপ্রাণে ছিলেন বাংলাদেশএর মানুষের পাশেই।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষ অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই মোদীর দু'দিনের ঢাকা সফর। এদিন বাংলাদেশের জীতয় দিবসে প্রায় ২২ মিনিট ধরে ভাষণ দিতে দেখা গেল মোদীকে। আর সেখানেই ভারত-বাংলাদেশ বন্ধিুত্বের পঞ্চাশবছর পূর্তির কথা শোনা গেল মোদীর মুখে। জানালেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জোরদার করেছে।
মোদী বলেন, ভারতীয়দের জন্য আশার এক কিরণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর সাহস ও তাঁর নেতৃত্ব এটা নিশ্চিত করেছিল যে, কোনও শক্তিই বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন- “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম ,এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” তাঁর নেতৃত্বেই সাধারণ মানুষ, কৃষক, যুবক, শিক্ষক ও শ্রমিক সকলেই এক হয়ে মুক্তিবাহিনী গঠন করে। তাই আজকের এই দিনটি মুজিববর্ষ , বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, তাঁর আদর্শ ও সাহসকে স্মরণ করার জন্যও আদর্শ একটি দিন। আজকের এই সময় “চির বিদ্রোহী” ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আবার স্মরণ করার সময়। মোদী মনে করিয়ে দেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি ভারতের প্রতিটি কোণা থেকে, প্রতিটি দল থেকে সমর্থন মিলেছিল। এই ক্ষেত্রে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীজির প্রয়াস ও মাহাত্ম্যপূর্ণ ভূমিকা সর্বজনবিদিত। সেই সঙ্গে অবশ্য অটল বিহারী বাজপেয়ীকেও স্মরণ করেন মোদী। বলেন, ওই সময়েই ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ অটল বিহারী বাজপেয়ী বলেছিলেন, “আমরা কেবল মুক্তি সংগ্রামে লড়াই করছি না, সেই সাথে আমরা ইতিহাসকে একটি নতুন দিশা দেয়ার প্রচেষ্টাও করছি। আজ বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামীদের সাথে ভারতীয় সেনারাও নিজেদের রক্ত বিসর্জন দিচ্ছে। এই রক্ত একটি নতুন বন্ধন সৃষ্টি করবে যা কোন অবস্থাতেই ভাঙবে না, কোন কূটনীতিরও শিকার হবে না।”
ঢাকায় দাঁড়িয়ে প্রণব মুখোপাধ্যায়কেও স্মরণ করেছেন মোদী। বলেন, আমাদের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও বঙ্গবন্ধুকে একজন অক্লান্ত রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ধৈর্য, প্রতিশ্রুতি ও আত্মসংযমের প্রতীক। এরপরেই তাঁর সংযোজন, এটি একটি আনন্দময় কাকতালীয় ঘটনা যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর আর ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর একসাথে পড়েছে। আমাদের উভয় দেশেরই জন্য একবিংশ শতাব্দীর আগামী ২৫ বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবেশেষে 'জয় বাংলা' বলে ভাষণ শেষ করতে দেখা যায় মোদীকে, সঙ্গে অবশ্যই বলেন 'জয় হিন্দ'-ও।