বাংলাদেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক। বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রকের হিসাবে চালের উৎপাদন যথেষ্ট ভালো, চাহিদার চেয়ে কমপক্ষে ৫০ লাখ টন বেশি। ফলে আমদানির দরকার নেই। কিন্তু চাল উদ্বৃত্ত থাকার পরও বাংলাদেশের বাজারে দফায় দফায় দাম বেড়েই চলেছে চালের।
বাংলাজেশের কৃষি মন্ত্রকের অধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) হিসাবে চলতি অর্থবছরে মোট ৪ কোটি ১২ লাখ টন চাল উৎপাদন হতে পারে। এর মধ্যে বোরো ধান ২ কোটি ৯ লাখ টন, আউশ ৩০ লাখ টন ও আমন ১ কোটি ৭০ লাখ টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আর বাংলাদেশে চালের চাহিদা ৩ কোটি ৫০ লাখ টনের কাছাকাছি। সেই হিসাবে বাংলাদেশে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকার কথা।
বাংলাদেশের সংবাদপত্র প্রথম আলোর খবরে বলা হয়েছে, রামজান চলছে,এই সময়ে বাংলাদেশের বাজারে চালের চাহিদা কিছুটা কম থাকে। এতে দাম বাড়ার কথা নয়। কিন্তু দুই সপ্তাহ ধরে দাম ধীরে ধীরে বাড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের খাদ্য মন্ত্রকের শুরুতে চালকলের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে। চালকলের মালিকেরা দাম না বাড়ানোর কথা বলা হয়। তারপরও পরিস্থিতি বদলায়নি, বরং বেড়েছে দাম। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, প্রতি কেজি চালের দাম গত এক সপ্তাহে দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর হিসাবে বাংলাদেশে চলতি বছর চাহিদার তুলনায় চালের উৎপাদন কিছুটা কম। গমের আমদানি কমে যাওয়ায় বেড়েছে চালের চাহিদা। এমন পরিস্থিতিতে হাসিনা সরকার চালের দাম কমাতে পুরোনো কৌশলই বেছে নিয়েছে। আমদানি শুল্ক ৬৭ থেকে ১৭ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। প্রাথমিকভাবে ৩০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৩ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রক। আরও কিছু প্রতিষ্ঠানকে আমদানির অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে চিন্তা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি সামল দিতে দুই লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হতে পারে। অন্যদিকে খাদ্য মন্ত্রকের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, বাজারে চালের সংকট নেই। আর এপ্রিলে বোরো ধান উঠবে। তারপরেও কেন হঠাৎ চালের দাম কিছুটা বেড়ে গেছে? এই প্রসঙ্গে খাদ্য মন্ত্রকের সচিবের বক্তব্য, আগামী এক মাসের মধ্যে যাতে দাম আর না বাড়ে, সে জন্য আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি মজুত করে চালের দাম আর বাড়াতে না পারে, সে জন্য আগাম ব্যবস্থা হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবে বাজারে মোটা চালের কেজি গত এক সপ্তাহে ২ টাকা বেড়ে ৫২ টাকা হয়েছে। আর সরু চাল তিন টাকা বেড়ে ৬৫ থেকে ৭৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের বিভিন্ন বাজারে ঘুরে এ ধরনের চালের দাম আরও বেশিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার চাল আমদানির পথে গেছে। ইতিমধ্যে ৩০টি প্রতিষ্ঠান চাল আমদানির অনুমতি নিয়েছে। তাদের বড় অংশ যশোর, সিলেট ও চট্টগ্রামের। তবে বড় আমদানিকারকদের অনেকে এবার চাল আনছেন না।