
কট্টরপন্থী ভারতবিরোধী যুবনেতা ওসমান হাদির মৃত্যু এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশে তৈরি হওয়া অরাজগকতা নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন শেখ হাসিনা। এএনআই-কে দেওয়া একটি ইমেল ইন্টারভিউতে বাংলাদেশের গদিচ্যুত প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এই মুহূর্তে ওখানে যা যা চলছে তার একমাত্র কারণ হল, মরিয়া হয়ে ওঠা ইউনূস প্রশাসন।' পাশাপাশি তিনি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন।
ওসমান হাদির মৃত্যু নিয়ে কী বলছেন হাসিনা?
শেখ হাসিনা বলেন, 'এই মর্মান্তিক ঘটনা প্রমাণ করে বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ইউনূস প্রশাসনের আমলে কোনও আইনের শাসন নেই। আমার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার নেপথ্যে যে আইনশৃঙ্খলার অবনতি কাজ করেছিল, ইউনূস প্রশাসনের আমলে তা দ্বিগুণ হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার হিংসাকে দমন করার জন্য কোনও ভূমিকাই পালন করছে না। তারা কার্যত হিংসা দেখেও নিশ্চুপ। ওদের ক্ষমতাই নেই এই অরাজগতা থামানোর।' এই ধরনের ঘটনার জন্য পড়শি দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে বলে মনে করছেন মুজিবুর কন্যা। ভারতের কথা উল্লেখ করে হাসিনা বলেন, 'ভারত এবং বাংলাদেশ একসঙ্গে যা তৈরি করেছিল, চোখের সামনে তা নষ্ট হতে দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার, অরাজগতা দেখছে ভারত। সীমান্ত স্বাভাবিক শান্তির পরিবেশ বজায় রাখতে না পারলে আন্তর্জাতিক স্তরে গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। এটাই এখন ইউনূসের আমলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি।'
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হাসিনা
দেশের নাগরিকদের উদ্দেশে হাসিনা বলেন, 'যে নিরাপদ, ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশে একটা সময়ে আমরা থাকবে, সেরকমটাই চাইছেন লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি নাগরিক। ক্যাবিনেটে এনে উগ্রপন্থীদের বসিয়েছেন ইউনূস। জেল থকে ছেড়ে দিয়েছেন সন্ত্রাসবাদীদের। জনসাধারণের জীবনে প্রভাব ফেলার জন্য সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে লাইসেন্স দিয়েছেন তিনি। উনি কোনও রাজনীতিবিদই নন, একটি দেশ চালানোর মতো অভিজ্ঞতাই তাঁর নেই। আমায় ভয়, চরমপন্থীরা তাঁর কাঁধে বন্দুক রেখে চালাচ্ছে। তাঁকে আন্তর্জাতিক স্তরে একটি মুখ হিসেবে দেখিয়ে ভিতরে ভিতরে চরমপন্থা ছড়িয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশে। এটা কেবল ভারতের জন্যই উদ্বেগজনক তা নয়, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার শান্তির জন্যও অ্যালার্মিং। বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতাই একমাত্র হাতিয়ার ছিল। বোকা মানুষজন এবং কিছু চরমপন্থীর জন্য সেই অস্ত্র আমরা কোনও মতেই হারাতে পারব না।'
ভারত বিরোধিতা নিয়ে হাসিনার বক্তব্য
কেন বাংলাদেশে ভারত বিরোধী হাওয়া চলছে? এ প্রসঙ্গে হাসিনা বলেন, 'ইউনূস সরকার যে চরমপন্থীদের বাংলাদেশে বেড়ে উঠতে দিচ্ছেন, তাদের জন্যই এই দমবন্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এরাই সেই চরমপন্থী যারা ভারতীয় দূতাবাসে হামলা চালিয়েছে, সংবাদমাধ্যমের অফিস জ্বালিয়েছে, সংখ্যালঘুদের আক্রমণ করেছে। এরাই আমাকে এবং আমার পরিবারকে প্রাণ হাতে নিয়ে পালাতে বাধ্য করেছে। ফলে ভারত নিজেদের প্রতিনিধিদের নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে, এটাই স্বাভাবিক। আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, দায়িত্ববান সরকার হলে কূটনৈতিক সম্পর্ককে গুরুত্ব দিত, তবে ইউনূস নৈরাজ্যবাদীদের আরও বেশি করে ছাড় দিচ্ছেন। এমনকী তাদের যোদ্ধা হিসেবে তকমা দিচ্ছেন।'
ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক কোথায় দাঁড়িয়ে?
ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির জন্য ফের একবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকেই দায়ী করলেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, 'ইউনূস প্রশাসন ভারতের বিরুদ্ধে নেতিবাচক বিবৃতি জারি করে। সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে ওরা ব্যর্থ। বিদেশনীতি পরিচালনা করছে চরমপন্থীরা। এরপর যখন অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে তখন মাথাব্যথা হয়। দশকের পর দশক ভারত এবং বাংলাদেশে একে অপরের বন্ধু রাষ্ট্র। আমাদের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক অনেক গভীর। ফলে কোনও অস্থায়ী সরকারের কারণে তা নষ্ট হতে পারে না। আমি আশাবাদী, বাংলাদেশে স্থায়ী গণতান্তান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় এলে ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক আবারও দৃঢ় হবে। এই সম্পর্ক অটুট থাকবে বলেই আমার বিশ্বাস।'